Sunday 19 September 2021

গোলাপগঞ্জে শিক্ষা ও সমাজসেবায় একজন ফজলুল হক ফজলু



প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় শিক্ষা ও সমাজসেবায় অনবদ্য ভূমিকা রাখা একজন ফজলুল হক ফজলু। যিনি সুদূর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেও নিজ উপজেলার শিক্ষা উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। 

১৯৯৮ সালে তিনি-সহ উপজেলার যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিক্ষানুরাগীরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা (১৯৯৮) সেক্রেটারী করা হয় ফজলুল হককে। এছাড়া শিক্ষাখাতে অনস্বীকার্য অবদান রাখায় ২০০২ইং সালে আবারও টানা দ্বিতীয়বারের মতো জেনারেল সেক্রেটারী নির্বাচিত হন তিনি। পরবর্তীতে পুরো উপজেলায় শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখায় এ ট্রাস্টের ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত করা হয় তাকে।


একনজরে ফজলুল হক ফজলুঃ

ফজলুল হক ফজলু বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও তাঁর পৈতৃক নিবাস সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বুধবারীবাজার ইউনিয়নের কুশিয়ারা তীরবর্তী চন্দরপুর গ্রামে। চন্দরপুর গ্রামের সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান তিনি। তাঁর পিতার নাম আব্দুস সাত্তার, মাতা জয়তুরা বেগম। পরিবারের ১৩জন ভাই-বোনের মধ্যে ফজলুল হক ৪র্থ। ব্যক্তিগত জীবনে ফজলুল হক ৩ মেয়ে ও ৩ পুত্রের জনক।

পরিবারের বর্তমান ঠিকানাঃ
ফজলুল হকের পৈতৃক নিবাস চন্দরপুরে হলেও সিলেট নগরীতে রয়েছে তাদের নিজস্ব আবাস। নগরীর আম্বরখানাস্থ জালাবাদ ১০/৭ আর.এ গোলাপকুঞ্জ ঠিকানায় বর্তমানে তাদের পরিবারের লোকজন বসবাস করছেন। তবে গ্রামের সাথে রয়েছে তাদের নিবিড় সম্পর্ক।



শিক্ষাজীবনঃ

ফজলুল হক বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও তাঁর জন্ম, বেড়ে উঠা ও শিক্ষাজীবন পার হয়েছে দেশের মাটিতেই। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় পৈতৃক ভূমি চন্দরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৭৮ইং সালে চন্দরপুর আল-এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সহিত এস,এস,সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখার জন্য তিনি ভর্তি হন সিলেট এমসি কলেজে। তবে এখানে কিছুদিন অবস্থান করে নিজেদের বাসা ও ব্যবসার সুবাদে পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। সেখানে গিয়ে তিনি মালিবাগের আবু জহুর জিফারী কলেজ থেকে ১৯৮০ইং সালে এইচ এস সি পাস করেন। পরবর্তীতে প্রবাসে পাড়ি জমানোয় তাঁর আর লেখাপড়া করা হয়ে উঠেনি।



প্রবাস জীবনঃ

ফজলুল হক উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখা শেষ করে ১৯৮২ইং সালে লিবিয়ায় পাড়ি জমান। সেখানে প্রায় ৩বছর ৬মাস মিনিস্ট্রি অব কমিউনিকেশনে চাকুরিরত অবস্থায় দেশে ফিরে আসেন। এরপর আবার ১৯৮৪ইং সালে কুয়েত পাড়ি জমান। সেখান থেকে ১৯৮৬ সালে যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি। সেই থেকে আজ অবধি তিনি যুক্তরাজ্যেই অবস্থান করছেন। বর্তমানে সেখানে তাঁর প্রপার্টি বিজনেস রয়েছে। যা গত ১৮বছর ধরে তিনি একটানা পরিচালনা করে আসছেন।


সংগঠক ফজলুল হকঃ




শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী ফজলুল হক একজন সফল সংগঠক হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। একজন সংগঠক হিসেবে তিনি ১৯৯৬ সালে ব্রিটিশ-বেঙ্গলী ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন ইউকে'র প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেন,  বর্তমানে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্ট গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় ছিলেন ফজলুল হক। এছাড়া বুধবারীবাজার ইউনিয়ন ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট ইউকে, চন্দরপুর ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকে, চন্দরপুর উন্নয়ন সমিতি ইউকে-সহ অসংখ্য সামাজিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় তাঁর ভূমিকা ছিলো অনস্বীকার্য।





রাজনীতি অঙ্গনে ফজলুল হকঃ




সামাজিক অঙ্গনের পাশাপাশি ফজলুল হকের বিচরণ রয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও। তিনি ঢাকায় পড়ালেখাকালীন সময়ে সক্রিয় ছাত্ররাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের (কভেন্ট্রি কনভেনশন হলে) জেনারেল সেক্রেটারি নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া বৃটিশ রাজনীতিতে লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির সক্রিয় সদস্য হিসেবে ২০০৬ সালে কাউন্সিলর পদে পার্টির মনোনয়ন পেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।





শিক্ষানুরাগী ফজলুল হকঃ

শিক্ষার উন্নয়নে ফজলুল হকের অবদান অনবদ্য। তিনি গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজ অবধি এ ট্রাস্টের একজন সফল সংগঠক ও সম্মানীত ট্রাস্টি। তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে এ ট্রাস্টের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ উপজেলাব্যাপী শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখেন। এর বাইরে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসায় সর্বদাই সহযোগিতা করে আসছেন। তিনি আল-এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয় ও ডিগ্রী কলেজ ট্রাস্ট ইউকে'র প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি। এছাড়া বিভিন্ন সময় গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদেরও সহযোগিতা করে আসছেন প্রতিনিয়ত।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে'র পক্ষ থেকে শাহজালাল একাডেমির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের হাতে ৫ লক্ষ টাকার চেক প্রদান করছেন গোলাপগঞ্জ এডুকেশন ট্রাস্ট ইউকে'র সভাপতি ফজলুল হক ফজলু ও সাধারণ সম্পাদক মখন মিয়া (২০১৬)।


 

সমাজসেবী ফজলুল হকঃ





ছাত্রজীবন থেকেই সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন ফজলুল হক ফজলু। ৮০'র দশকে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ালেখাকালীন তিনি ঢাকায় জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন। এরপর প্রবাসে পাড়ি জমালেও নিজ মাটির মানুষের সেবায় সর্বদাই কাজ করে আসছেন। কখনও ব্যক্তিগতভাবে, কখনোবা সংগঠনের মাধ্যমে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছেন সবসময়। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেও হয়েছেন আজীবন দাতা সদস্য। নিজের মরহুমা মেয়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন শিরিন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ইউকে। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ, শীতার্থ মানুষদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ-সহ বিভিন্ন সামজিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।



এর বাইরেও ফজলুল হক ফজলু অসংখ্য সংগঠনের সাথে রয়েছেন সম্পৃক্ত। তিনি বৃটিশ-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের (BBCC)-এর কর্পোরেট সদস্য। বিভিন্ন ট্রাস্টের আজীবন ট্রাস্টি-সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও খেলাধুলায় পৃষ্টপোষকতা করার পাশাপাশি তরুণদের মাঝে সমাজসেবার প্রতি উদ্দীপনা জাগাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।





শেয়ার করুন