Friday, 2 July 2021

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ফের ইসরাইলের বিমান হামলা

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজায় ফের ইসরাইলের বিমান হামলা



যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে গাজা উপত্যকায় ফের বিমান হামলা চালিয়েছে বর্বর ইসরাইল। শুক্রবার ভোরে এ হামলা চালানো হয়। খবর আনাদোলুর।

খবরে বলা হয়, গাজায় হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে শুক্রবার ভোরের দিকে ইসরাইল বিমান হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) টুইটারে এক বার্তায় বলে, গাজা থেকে বিস্ফোরকভর্তি বেলুন পাঠানোর জবাবে হামাসের অস্ত্রাগারে হামলা চালানো হয়। সেখানে অস্ত্র সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়নের কাজ চলত।

যদিও এ হামলার বিষয়ে হামাস এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।

এর আগে ১০ মে গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। এর পর থেকে ২১ মে পর্যন্ত ইসরাইলি বিমান হামলায় গাজায় ২৮৯ ফিলিস্তিনি নিহত হন। অপরদিকে হামাসের ছোড়া রকেটে নিহত হন ইসরাইলের ১৩ জন। পরে মিসরের মধ্যস্থতায় ২১ মে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে শান্ত হয় পরিস্থিতি। কিন্তু এ যুদ্ধবিরতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গাজায় ফের বিমান হামলা চালালো ইসরাইল।

সিলেটে মুখে ওড়না বেঁধে গৃহবধূ ধর্ষণ

সিলেটে মুখে ওড়না বেঁধে গৃহবধূ ধর্ষণ


সিলেটে মুখে ওড়না দিয়ে বেঁধে এক গৃহবধূ (২১) ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাতে বিমানবন্দর থানাধীন এলাকায় আমিনুর রহমান আমির নামের এক যুবক ওই গৃহবধূকে ধর্ষণ করেন।

এ ঘটনায় গৃহবধূ বিমানবন্দর থানায় আমির নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ জানায়, প্রায় ১৫ দিন পূর্বে গোয়াইনঘাট এলাকা থেকে বিমানবন্দর এলাকাস্থ পিত্রালয়ে এক সন্তানকে নিয়ে বেড়াতে আসেন গৃহবধূ। বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে গৃহবধূর পিতা-মাতা তাকে বাসায় একা রেখে তার তিন বছরের সন্তানকে সাথে নিয়া ধোপাগুলস্থ তাদের রেষ্টুরেন্টে চলে যান। রাত আনুমানিক ৮টা ১৫ মিনিটে গৃহবধূ প্রকৃতির ডাকে ঘর হতে বের হয়ে পূনরায় ঘরের ভেতরে এসে ঘরের দরজা বন্ধ করেন এবং বিছানায় যান। এসময় আমিনুর রহমান আমির গৃহবধূকে বিছানার উপর ঝাপটে ধরে। তখন গৃহবধূ চিৎকার করার চেষ্টা করলে আমির তার ওড়না দিয়ে মুখে চাপ দিয়ে ধর্ষণ করে। রাত ৯টার দিকে গৃহবধূর পিতা-মাতা বাড়ীতে এসে ঘরের দরজা খোলার জন্য ডাকাডাকি করলে তখন আমির গৃহবধূকে ছেড়ে দিয়ে পিছনের দরজা খুলে পালিয়ে যায়। ভিকটিমের দরজা খুলতে দেরি হওয়ায় এবং পিছনের দরজা খোলার শব্দ পেয়ে তার পিতা-মাতা বিবাদী আমিরকে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখতে পান।

মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আশরাফ উল্যাহ তাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, গৃহবধূ গোয়াইনঘাট থেকে প্রায় ১৫ দিন পূর্বে বিমানবন্দর থানাধীন এলাকাস্থ তার পিত্রালয়ে আসেন বেড়ানোর জন্য। বৃহস্পতিবার ওই গৃহবধূকে আমির নামের এক যুবক ধর্ষণ করেছে বলে গৃহবধূ নিজেই বাদী হয়ে ধর্ষণের ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আসামীকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।

Thursday, 1 July 2021

লকডাউনে নিরব-নিস্তব্ধ সিলেট

লকডাউনে নিরব-নিস্তব্ধ সিলেট

ছবি : ইদ্রিছ আলী


পিচঢালা রাস্তা ধরে যতদূর চোখ যায়, নেই যান আর জনমানুষের রুদ্ধশ্বাস ছুটে চলা। সড়কবাতিগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে নি:সঙ্গ, একা। নেই রিকশার টুংটাং আর কান বিদীর্ণ করা গাড়ির হর্নের বিকট শব্দ। বিপণিবিতান আর দোকানপাটে ঝুলছে তালা। প্রায় জনমানবশূন্য গা ছমছমে এক শহর সিলেট।

করোনার ভয়াবহ সংক্রমণ ঠেকাতে ৩ দিনের ‘সীমিত লকডাউন’ শেষে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) ভোর থেকে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটেও শুরু হয়েছে ‘কঠোর লকডাউন’।

কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে (বৃহস্পতিবার) প্রায় যান ও জনশূণ্য অবস্থায় ছিলো সিলেটের রাস্তাঘাট। ব্যস্ততম সড়কগুলোও ছিলো ফাঁকা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাসা-বাড়ি থেকে বের হননি মানুষজন।

দিনমান শহর ঘুরে দেখা যায়, নগরীর প্রবেশদ্বার ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এছাড়া লকডাউন বাস্তবায়নে রাস্তায় টহল দিচ্ছে র‍্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।

এক সপ্তাহের কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট, চৌহাট্টা পয়েন্ট, আম্বরখানা, মদিনামার্কেট, শেখঘাট জিতু মিয়ার পয়েন্ট ও পাঠানটুলাসহ বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। রাস্তায় বের হওয়া লোকজন ও যানবাহন আটকে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জিজ্ঞাস করেন তারা। সদুত্তর না পেলে যাত্রীদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। আর যানবাহনের কাগজপত্র না থাকলে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় মামলার কাগজ।

সকাল থেকে নগরীর রাস্তায় রিকশা চলাচল করলেও তা অন্যদিনের তুলনায় ছিলো কম। বাস, সিএনজি অটোরিকশা, লেগুনাসহ সবধরণের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অতি জরুরি প্রয়োজনে কেউ প্রাইভেট গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হলে পড়তে হয় পুলিশি জেরা ও তল্লাশির মুখে। রিকশা আটকেও যাত্রীদের ঘর থেকে বের হওয়ার কারণ জানতে চাচ্ছে পুলিশ।

এছাড়া নগরীর প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত চন্ডিপুল, হুমায়ূন রশিদ চত্বর, টিলাগড়, বিমানবন্দর সড়ক, কুমারগাঁওয়ে চৌকি বসিয়ে যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল রোধ করে পুলিশ।

এদিকে, নগরীতে দিনের বেলা নিত্যপণ্য, ফার্মেসি ও জরুরি সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সবধরণের দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ ছিলো। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতাসমাগম খুবই কম।

তবে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে সিলেট নগরীতে দেখা যায় অন্যরকম এক চিত্র। যে শহরে মধ্যরাত পর্যন্ত থাকে কোলাহল, সেই শহর সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে হয়ে পড়ে ভুতুড়ে। যে অল্পসংখ্যক মানুষ জরুরি প্রয়োজনে বাইরে ছিলেন তাদেরকেও ত্রস্ত পায়ে ফিরতে দেখা যায় নিজ নীড়ের দিকে। অনেক্ষণ পর পর দেখা যায় একটা-দুটা রিকশা বা মোটরসাইকেল।


সৌজন্যেঃ সিলেট ভিউ২৪ ডটকম

কঠোর লকডাউন দেখতে এসে আটক ১০০

কঠোর লকডাউন দেখতে এসে আটক ১০০


ডেস্ক নিউজঃ করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাত দিনের জন্য দেশজুড়ে আরোপ হয়েছে 'কঠোর' বিধিনিষেধ। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে কার্যকর হওয়া এই লকডাউন চলবে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত। এবারের লকডাউনে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ 'কঠোর'ই করার ইঙ্গিত মিলেছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করার কথা বলেছে পুলিশ। বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে থাকছে সেনাবাহিনীও।

আর কঠোর এ লকডাউন কেমন চলছে তা দেখতে এসে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় শতাধিক ব্যক্তি আটক হয়েছেন পুলিশের হাতে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিরপুর বিভাগ তাদেরকে আটক করে। পাশাপাশি অর্ধশত যানবাহনকে মামলার আওতায় নিয়ে এসেছে তারা।

বৃস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মিরপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, শাহ আলী, পল্লবী, মিরপুর, কাফরুলসহ অন্যান্য পুলিশ শতাধিক জনকে আটকসহ অর্ধশতাধিক যানবাহনকে মামলা দেয়। মিরপুরে দুই জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে এখনো চলছে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ অভিযান।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আ স ম মাহতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হওয়া সরকারি বিধিনিষেধ পরিপালনে মাঠে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

মিরপুর বিভাগের ডিসি আ স ম মাহতাব উদ্দিন জানান, মিরপুরের বিভিন্ন পয়েন্টে সকাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। স্থাপন করা হয়েছে একাধিক চেকপোস্ট। এসব চেকপোস্টে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট থানার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।

সিলেটের প্রতিটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিঃ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

সিলেটের প্রতিটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধিঃ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত



কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সিলেটের প্রতিটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। উজানের ঢলে গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার বেশকিছু এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী তিন থেকে চার দিন এভাবে বৃষ্টি থাকবে। এরপর থেকে কমবে বৃষ্টির পরিমাণ।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (৩০ জুন) সুনামগঞ্জের যাদুকাটা ও সারি নদীর পানি বিপদসীমার নিচ নিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মঙ্গলবার (২৯ জুন) এ দুই নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

আর মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বুধবার (৩০ জুন) সকাল ৯টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জ স্টেশনে ১৭৫ মিলিমিটার, লালাখালে ৯২ মিলিমিটার, জাফলংয়ে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী কয়েকদিন এভাবে বৃষ্টিপাত হবে। তবে এই বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক। টানা বৃষ্টিপাত আরও আগে হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটি অনেক দেরিতে হয়েছে।

আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, আগামী তিন দিন এরকম টানা বৃষ্টি হবে। সিলেটে দিনে ও রাতে সমানতালে বৃষ্টি হচ্ছে। এটি সিলেটের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত।

এদিকে উজানের ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে এসব উপজেলার বেশি কিছু এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

তথ্যানুযায়ী, ভারতের চেরাপুঞ্জি স্টেশনে ২২১ মিলিমিটার, শিলংয়ে ৪২ মিলিমিটার এবং আইযল স্টেশনে ৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এতে করে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদী সুনামগঞ্জ ও তিস্তা নদী ডালিয়ে পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

সিলেট জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (মিডিয়া সেল) শামমা লাবিবা অর্ণব বলেন, বন্যা হলে ত্রাণ বিতরণের প্রস্তুতি আছে। সিলেট জেলার অভ্যন্তরে সব বাঁধও পরীক্ষা করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুজ্জামান সরকার, সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাত এবং উজানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বৃষ্টির কারণে নদীগুলোর পানি বাড়ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমার পানি আরও বাড়তে পারে।
সেনাদের টহলঃ জনশূন্য বিয়ানীবাজারের রাস্তাঘাট

সেনাদের টহলঃ জনশূন্য বিয়ানীবাজারের রাস্তাঘাট


নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে যান ও জনশূণ্য অবস্থায় রয়েছে বিয়ানীবাজারের রাস্তাঘাট। ব্যস্ততম সড়কগুলোও রয়েছে ফাঁকা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। পৌরশহরসহ উপজেলাজুড়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেনাবাহিনী ও বিজিবির একাধিক টিম লকডাউন কার্যকরে মাঠে কাজ করছে। সকাল থেকে উপজেলাজুড়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে টহল দিতে দেখা গেছে।

এছাড়া বারইগ্রাম-সিলেট আভ্যন্তরীন সড়কসহ সবকটি সড়কের বিয়ানীবাজার অংশে চলছে না কোনো গণপরিবহন। জরুরি সেবার আওতাভুক্ত কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে। তারপরও পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে ছাড়ছে ট্রাফিক পুলিশ। সীমিত লকডাউনে মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া হলেও এখন তা চলতে দেওয়া হচ্ছে না। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিয়ানীবাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।

বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান জানান ‘সকাল থেকে কোনো গণপরিবহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে’। বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলায় সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশমুখে পুলিশের চেকপোস্ট থাকছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পুলিশের একটি টিম সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি উপজেলাজুড়ে পুলিশের দুটি মোবাইল টিম সক্রিয় রয়েছে।

বিয়ানীবাজার পৌরশহর ও উপজেলার বারইগ্রাম বাজারে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক নূর ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুশফিকীন নূর। তারা বলেন, জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, বিয়ানীবাজারে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন।

কঠোর লকডাউনে যান ও জনশূন্য সিলেটের সড়ক

কঠোর লকডাউনে যান ও জনশূন্য সিলেটের সড়ক


ডেস্ক নিউজঃ করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাত দিনের জন্য দেশজুড়ে 'কঠোর' বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে কার্যকর হওয়া এই লকডাউন চলবে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত। এবারের লকডাউনে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ 'কঠোর'ই করার ইঙ্গিত মিলেছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করার কথা বলেছে পুলিশ। বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে থাকছে সেনাবাহিনীও।

কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে যান ও জনশূণ্য অবস্থায় রয়েছে সিলেটের রাস্তাঘাট। ব্যস্ততম সড়কগুলোও রয়েছে ফাঁকা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ।

নগরীর প্রবেশদ্বার ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এছাড়া লকডাউন বাস্তবায়নে রাস্তায় টহল দিচ্ছে র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে নগরীর রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। মাঝে-মধ্যে ২/১টি রিক্সা চলাচল করলেও যন্ত্রচালিত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ১১টার পর নগরীর বিভিন্ন সড়কে সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। লকডাউনের প্রচারণায় নগরীতে সিলেট সিটি কপোরেশনের উদ্যোগে সকাল থেকে নগরীতে মাইকিং করা হচ্ছে। 

সকালে সিলেট নগরীর বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের চিত্র দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে; চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কাউকে থাকতে দিচ্ছে না তারা

সড়কে থামিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন- এমন সব প্রশ্নের পর যৌক্তিক জবাব দিতে পারলেই সাধারণ মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে। না হয় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সবাইকে। রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না। চলছে ব্যক্তিগত, অফিসের গাড়ি। রিকশা চালু আছে। অনেকেই গন্তব্যে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে।

এর আগে গত রোববার বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েও সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সমন্বয়হীনতায় তা পিছিয়ে যায়। এই সময়ে ঢাকা থেকে গ্রামে এবং গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেছে। বুধবার শেষ দিনেও মানুষের এ চলাচল অব্যাহত ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা গেছে।

জরুরি সেবা ছাড়া সব দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, শিল্প কারখানা, যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে৷ আর্থিকসহ অন্যান্য সেবা দেয়ার প্রয়োজনে কিছু অফিস সীমিত আকারে খোলা থাকবে৷ তবে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।

সরকারি বিধিনিষেধ এবং মানুষের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও সেনাবাহিনী। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। পুলিশ জানিয়েছে, বিনা কারণে বাড়ির বাইরে বের হলেই গ্রেফতার করা হবে।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিধিনিষেধের কঠোর প্রয়োগ চান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, যে 'কঠোর' লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি যেন কঠোরই হয়। জীবন রক্ষার স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি যাতে পরিকল্পনা মাফিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে করা হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দরিদ্র, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্যথায় ভোগান্তি বাড়বে, কিন্তু কাজের কাজ হবে না।

এর আগে গত ২৪ জুন কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে সারাদেশে ১৪ দিনের 'শাটডাউনের' সুপারিশ করা হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে কমিটি। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে সব প্রস্তুতি থাকার পরও স্বাস্থ্যব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।

এরপর ২৫ জুন রাতে প্রেসনোট জারি করে ২৭ জুন থেকে সারাদেশে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরদিন রাতে বৈঠকে তা পিছিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে করার সিদ্ধান্ত আসে।

তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সমকালকে বলেন, অর্থবছরের শেষ সময়ে অর্থ ছাড় করাসহ বিভিন্ন বিষয় থাকে। এ কারণে ২৭ জুন থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে সমস্যা হতো। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত সাত দিনের জন্য এটি কার্যকর থাকবে। তবে প্রয়োজন মনে করলে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে।

যা বন্ধ থাকবে : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন এবং অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট এবং পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করা যাবে না। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার) ছাড়া কেউ কোনোভাবে ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যা খোলা থাকবে : আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা (কৃষিপণ্য-উপকরণ-খাদ্যশস্য-খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্ব্বাস্থ্যসেবা, করোনা টিকাদান, রাজস্ব আদায় কার্যাবলি, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ জরুরি পণ্য-সেবার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে)। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) ও সংশ্নিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। কাঁচাবাজার-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইনে কেনা বা খাবার নিয়ে যাওয়া) করতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে। বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ধর্ম মন্ত্রণালয় তাদের সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার থেকেই সারাদেশে গণপরিবহন, শপিংমল, মার্কেটসহ বেশ কিছু কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।