Sunday, 8 August 2021

মসজিদের বারান্দায় টিকটক ভিডিও, যুবক গ্রেপ্তার

মসজিদের বারান্দায় টিকটক ভিডিও, যুবক গ্রেপ্তার




কুমিল্লা দাউদকান্দির মডেল মসজিদে হিন্দি গানের সাথে টিকটক ভিডিও শুটিং করার ঘটনায় জড়িত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার যুবকের নাম ইয়াছিন (২০)। তার বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলার ভিংলাবাড়ী এলাকায়। জেলার দেবিদ্বার উপজেলার  ভিংলাবাড়ী থেকে শনিবার (৭ আগস্ট) রাতে তাকে আটক করা হয়।

রবিবার (০৮ আগস্ট) কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমেদ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) আবদুর রহীম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ তানভীর আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোঃ আফজল হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর দফতর) নাজমুল হাসান রাফিসহ জেলা পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।




অভিযান পরিচালনাকারী কুমিল্লা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক পরিমল দাশ জানান, মসজিদে টিকটক ভিডিও তৈরিকারীকে তার বাসা থেকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। রবিবার গ্রেপ্তার ইয়াছিনকে আদালতে নিলে বিচারক গোলাম মাহবুব খান তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে নির্মিত জেলার প্রথম মডেল মসজিদের বারান্দায় টিকটক ভিডিও বানানোর অভিযোগ ওঠে দুই তরুণ ও তরুণীর বিরুদ্ধে। তাদের ধারণ করা ভিডিওটি পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে মুসল্লিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

টিকটক ভিডিওটি নজরে আসে দাউদকান্দি সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. জুয়েল রানার। তিনিও তার ব্যবহৃত আইডি থেকে ওই দুই তরুণ-তরুণীদের পরিচয় চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। মো. জুয়েল রানা জানান, মসজিদের বারান্দায় টিকটক ভিডিওর বিষয়টি মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তাদেরকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দেশীয় ১৫ প্রজাতির মাছের পেটে মিলল প্লাস্টিকের অস্তিত্ব

দেশীয় ১৫ প্রজাতির মাছের পেটে মিলল প্লাস্টিকের অস্তিত্ব



ডেস্ক নিউজঃ দেশীয় ১৫ প্রজাতির মাছের পেটে মিলেছে প্লাস্টিকের অস্তিত্ব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।


পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’-এ গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণার সুপারভাইজার (তত্ত্বাবধায়ক) ছিলেন বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক ও সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা পারভিন।

জাবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া জান্নাত তার মাস্টার্সের থিসিসের অংশ হিসেবে এ গবেষণা করেন। যেখানে ১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ নিয়ে গবেষণা করা হয়। যার মধ্যে ১৫টি মাছের মধ্যেই প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার (মাইক্রোপ্লাস্টিক) অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

সুমাইয়া জান্নাত বলেন, গবেষণার জন্য সাভার ও আশুলিয়া থেকে মাছ সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষাকৃত মাছগুলোর ৭৩ দশমিক ৩ শতাংশে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

গবেষণায় বলা হয়, কালবাউশ, বেলে, টেংরা, কই, বাটা, রুই, তেলাপিয়া, কমন কার্প, পাবদা, পুঁটি, রয়না, শিলং, বাইন, টাটকিনি ও বাছা মাছের শরীরে প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এর মধ্যে টেংরা, টাটকিনি ও রায়না মাছের শরীরে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি।

এসব মাছে তিন ধরণের প্লাস্টিক পলিমারের উপস্থিতি পাওয়া যায়। দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, জুস, শ্যাম্পুর বোতল, প্লাস্টিকের ব্যাগ, কনটেইনার, প্লাস্টিক ও ফোমের জুতা এবং মোড়ক থেকে এসব প্লাস্টিক পরিবেশে প্রবেশ করে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, যেসব মাছ পানির সবচেয়ে নিচের স্তরে বাস করে, তাদের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি বেশি। বাংলাদেশের জলাধারগুলোতে প্লাস্টিক বর্জ্যসহ বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ফেলা হয়। আকারে খুবই ছোট হওয়ায় মাছ এসব মাইক্রোপ্লাস্টিক নিজেদের খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে।

বাংলাদেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাছের পরিপাকতন্ত্র ফেলে দেয়া হয় বলে এসব প্লাস্টিক কণা খাদ্যের সঙ্গে মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে না। তবে এসব প্লাস্টিক থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত রাসায়নিক মাছের দেহে জমা হয়, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে।


গবেষণার তত্ত্বাবধানে থাকা পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক বলেন, ‘আমাদের দেশে যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখা যায়। পানিতেও যেহেতু প্লাস্টিক ফেলা হয়, তাই জলজপ্রাণীরা সেগুলো খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে কি-না, তা এ গবেষণার মাধ্যমে জানার চেষ্টা করা হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো- ১৮ প্রজাতির দেশীয় মাছ পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ১৫টি প্রজাতির মধ্যেই খালি চোখে দেখা যায় না এমন প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা পাওয়া গেছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাজউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক কারণে নানাভাবে মানুষের শরীরে প্লাস্টিক প্রবেশ করছে। কিন্তু এসব প্লাস্টিক অতিমাত্রায় শরীরে প্রবেশ করলে তা মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।’
এক দেশ, এক রেটঃ বেঁধে দেওয়া হলো আইআইজি-এনটিটিএন সেবার দাম

এক দেশ, এক রেটঃ বেঁধে দেওয়া হলো আইআইজি-এনটিটিএন সেবার দাম



টেক ডেস্কঃ সারাদেশে ইন্টারনেট সেবার দাম নির্দিষ্ট দেওয়ার পর এবার বেঁধে দেওয়া হলো আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও এনটিটিএন (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা) সেবার মূল্য। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৪ আগস্ট ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এই সেবার মূল্য বেঁধে দিয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এরফলে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবার মূল্য ‘এক দেশ এক রেট’ শতভাগ বাস্তবায়নের পথে আরও এক ধাপ অগ্রসর হলো।

এ বিষয় নিয়ে বিটিআরসি শনিবার (৭ আগস্ট) আইএসপিএবি ও আইআইজি ফোরামের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠক করে সরকারের সিদ্ধান্ত (সেবামূল্য বেঁধে দেওয়া) জানায়।


এর আগে দেশে প্রথমবারের মতো গত ৬ জুন সরকার তিনটি ক্যাটাগরিতে (৫, ১০ ও ২০ এমবিপিএস) ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেয়। তখন এর বাইরে ছিল আইআইজি ও এনটিটিএন খাত। ফলে এতদিন ইচ্ছেমতো সেবার মূল্য নির্ধারণ করা হতো। এতে করে আইএসপি খাতে প্রকাশ্যে অসন্তোষ ছিল। তাই এবার দীর্ঘদিনের সেই অসন্তোষ দূর হতে যাচ্ছে।

ইন্টারনেটের মূল্যসীমা বেঁধে দেওয়ার সময় ঘোষণা করা হয়, শিগগিরই আইআইজি ও এনটিটিএন সেবার দাম বেঁধে দেওয়া হবে। তারই ধারাবাহিকতায় এই সিদ্ধান্ত। 

জানা গেছে, এই দুটি সেবার দাম বেঁধে দেওয়ার ঘোষণা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে তা কার্যকর হতে পারে।  

আইআইজি ও এনটিটিএন সেবার দাম বেঁধে দেওয়া হলে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারীরা ভালো মানের সেবা পাবেন। এছাড়া দাম একই হওয়ার কারণে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মানের সেবা দিয়ে গ্রাহক ধরে রাখতে চাইবে। অপরদিকে ঢাকার বাইরের ডাটা প্রোভাইডার ও আইএসপিরা (ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান) বিশেষ সুবিধা পাবে যা প্রকারান্তরে গ্রাহকরা ভোগ করবে বলে জানান আইএসপি ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শনিবার (৭ আগস্ট) রাতে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা এর আগে এন্ড ইউজারদের (ইন্টারনেট ব্যবহারকারী) জন্য মূল্য বেঁধে দিয়েছিলাম। এটা কোনও পূর্ণ চিত্র ছিল না এই খাতের জন্য। অন্যদিকে আইএসপিগুলো যে সেবা দেয়, তা আইআইজি ও এনটিটিএন অপারেটরের ওপর নির্ভরশীল। এজন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রুত এই দুটো সেবার দাম বেঁধে দেওয়া। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে সেবা পরিবহন মূল্যের যে প্রস্তাবনা পাঠায় তা আমরা দেখে অনুমোদন করে দিয়েছি।  

তিনি আরও বলেন, আমরা ‘এক দেশ এক রেট’ ঘোষণা করার পর দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আইএসপির অভিযোগ পাচ্ছিলাম, এনটিটিএন ও আইআইজি সেবা মূল্য বেঁধে দেওয়া না হলে এই রেট বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। আশা করি এক দেশ এক রেট বাস্তবায়ন করতে আইএসপিগুলোর কোনও অসুবিধা হবে না।


জানা গেছে, আইআইজির জন্য বিভিন্ন ভলিউমে ১১টা স্ল্যাবে ব্যান্ডউইথের মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে এনটিটিএনগুলোর জন্য ট্রান্সমিশন ক্যাপাসিটির ভলিউম অনুযায়ী ১৫টি স্ল্যাবে সেবামূল্য বেঁধে দিয়েছে বিটিআরসি।   

জানতে চাইলে আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বিটিআরসি গত ১০-১২ বছর ধরে বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করছে। অবশেষে সফল হলো। এতে করে ব্যবহারকারীরা মান সম্মত সেবা পাবেন। বিটিআরসি একইসঙ্গে গ্রেড অব সার্ভিস নিশ্চিতের কথাও বলেছে। এসবের ফলে সারাদেশে ইন্টারনেটে ‘এক দেশ এক রেট’ বাস্তবায়নের পথে আরও একধাপ অগ্রগতি হলো।

দেশে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেন, সরকার এক দেশ এক রেট ঘোষণা করার পরও ঢাকার বাইরে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে আইএসপিগুলো এই সেবা দিতে পারছিল না। তাদের ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিশন (পরিবহন) খরচ বেশি লাগত। সেবামূল্য বেঁধে দেওয়ার কারণে আইএসপিগুলো ঢাকার দামেই জেলা বা উপজেলায় ব্যান্ডউইথ পাবে। তাদের ট্রান্সমিশন খরচ কম পড়বে। 

তিনি আরও বলেন, অনেক আইএসপি দুই বা তিন এমবিপিএস ব্যান্ডউইথের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ৫শ’ টাকা করে নিতো। এখন আর এটা থাকবে না।   
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে "বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা" কর্মসূচি

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে "বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা" কর্মসূচি




বাংলাদেশ ছাত্রলীগের উদ্যোগে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে "বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা"। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মদিন উপলক্ষে এ কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।


বঙ্গমাতার জন্মদিবসের প্রারম্ভে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজ থেকে সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় এবং সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি এ তথ্য জানানো হয়।


এতে বলা হয়, ৮ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙ্গালী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সহধর্মিণী, মহিয়সী নারী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার রত্নগর্ভা মাতা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকী। বঙ্গমাতা ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোয়াপ্লগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নীরব দক্ষ সংগঠক হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রতিটি ধাপে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন এবং বঙ্গবন্ধুকে হিমালয়সম আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। বঙ্গবন্ধু, বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ যেমন একই সূত্রে গাঁথা, তেমনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবও পরষ্পর অবিচ্ছেদ্য নাম। বাঙালির নিরন্তন প্রেরণার চিরন্তন উৎস, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পুরো রাজনৈতিক জীবনে ছায়ার মতো পাশে ছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালের কালোরাতে তিনি জাতির পিতার হত্যাকারীদের হাতে নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন। আটপৌঢ়ে সাধারণ বাঙালি গৃহবধূ কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন, ধৈর্যশীল, সংগ্রামী এবং স্নেহ-ভালোবাসার আধার ছিলেন বঙ্গমাতা। জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মাতৃতুল্য স্নেহে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে আগলে রেখেছিলেন। বঙ্গমাতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এবং করোনা মহামারীর কারণে দেশ ও জাতির এই ক্রান্তিকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ দেশব্যাপী একযোগে চালু করতে যাচ্ছে "বঙ্গমাতা অক্সিজেন সেবা"।


স্থানঃ মধুর ক্যান্টিন তারিখঃ ০৮/০৮/২০২১ সময়ঃ বিকেল ৫ ঘটিকা।

এ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীকে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।



লালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান পীর ইকবালের মাতৃবিয়োগঃ দাফন সম্পন্ন, বিভিন্ন মহলের শোক

লালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান পীর ইকবালের মাতৃবিয়োগঃ দাফন সম্পন্ন, বিভিন্ন মহলের শোক



দক্ষিন সুরমা উপজেলার ৬নং লালাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পীর ফয়জুল হক ইকবালের মাতা সানোয়ারা খানম চৌধুরী শনিবার (৭ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন, ইন্না-লিল্লাহি.... রাজিউন।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি এক পুত্র, এক কন্যা, নাতি নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।


মরহুমার জানাযার নামাজ শনিবার (৭ আগস্ট) বাদ মাগরিব বাগেরখলা পীরবাড়ীস্হ নিজ বাড়ীতে অনুষ্ঠিত হয়। পরে মরহুমার লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযার নামাজে উপস্থিত ছিলেন সিলেট ৩ আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক, আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব।

জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরীর সাবেক আমীর এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, দক্ষিন সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফারুক আহমদ, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় শ্রমিকলীগের সাধারন সম্পাদক জুয়েল আহমদ, সিলেট জেলা বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ জিল্লুর রহমান শোয়েব, হযরত আবু দৌলত শাহ জাকারিয়া মডেল মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাওলানা ফারুক আহমদ, সাবেক চেয়ারম্যান খায়রুল আফিয়ান চৌধুরী প্রমুখ
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা রেণুর অবদান

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা রেণুর অবদান

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা

স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা রেণুর অবদান
মো. আব্দুল মালিক

কবি বলেছেন, -
‘রাজা করিতেছে রাজ্য শাসন, রাজারে শাসিছে রানী।
রানীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে, রাজ্যের যত গ্লানি।’
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আক্ষরিক অর্থে বাংলার রাজা না হলেও তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির মুকুটহীন সম্রাট। শেখ মুজিবুর রহমান একদিনে বঙ্গবন্ধু বা জাতির জনক বা সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হন নাই। তিনি ধাপে ধাপে খ্যাতির এই শীর্ষে আরোহন করেছেন। আর এই শীর্ষে আরোহণের পিছনে যে মানুষটি তাঁকে ছায়ার মতো অনুসরণ করেছিলেন, আগলে রেখেছিলেন, সাহস যুগিয়েছিলেন, উৎসাহ-উদ্দীপনা, বুদ্ধি পরামর্শ দিয়েছিলেন, নিজের জীবনের সুখ সাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়ে আর্থিক সাহায্য করেছিলেন তিনি আর কেউ নন- তিনি হলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। যার ডাক নাম রেণু।


শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আপন চাচাতো বোন। পিতা-মাতা মারা যাওয়ায় দাদা শেখ কাশেম তাঁর দুই নাতনি ফজিলাতুন নেছা ও জিন্নাতুন নেছাকে দুই ভাতিজার সাথে বাল্য বিয়ে দেন। তখন ফজিলাতুন নেছার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। পাঁচ বৎসর বয়সে ফজিলাতুন নেছা রেণু আসেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মা-বাবা ভবিষ্যৎ পুত্রবধু ফজিলাতুন নেছাকে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য সহধর্মিনী হিসেবে গড়ে তুলতে থাকেন। তাঁদের সেই পরিশ্রম বৃথা যায় নি। বঙ্গবন্ধু ছাত্রাবস্থায়ই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন প্রথম জেলে যান এবং মাত্র ৫৫ বছর ০৪ মাস ২৭ দিন জীবনের মধ্যে বিভিন্ন মামলায় প্রায় ৮ বছর ৫ মাস ২৩ দিন জেলে অতিবাহিত করেন। এই জেল জীবনে বঙ্গবন্ধুর খোঁজ খবর নেয়া, তাঁকে জেল থেকে বের করা, আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তোলার জন্য নেতাকর্মীদের সংগঠিত করা, পরামর্শ দেয়া, নেতাকর্মীরা জেলে গেলে তাদের পরিবারের খোঁজ নেয়া সর্বোপরি নিজের পরিবার সামলানো- এ ছিল এক বিরাট চ্যালেঞ্জ এবং ভীষণ দূর্বিসহ জীবন। তখন বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে কেউ বাসা ভাড়া দিতে রাজি হতো না, দিলেও কিছুদিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে হতো। আত্মীয় স্বজনরা পর্যন্ত সম্পর্ক রাখতে চাইতো না পাছে সরকারের রোষানলে পড়তে হয় এই ভয়ে। কিন্তু বঙ্গমাতা এতো সব সমস্যার মধ্যেও কখনো ভেঙ্গে পড়েন নি, হতাশ হন নি বা বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে যান নি। বিশ্বের ইতিহাসে এমন নির্যাতিত-নিপীড়িত নেতার স্ত্রী স্বামীকে ছেড়ে চলেগেছেন এমন প্রমানও আছে। বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ছেলেমেয়েদের যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন, আত্মীয় স্বজন, নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রেখেছেন। তাদের বিপদে আপদে এগিয়ে গেছেন। বঙ্গবন্ধুকে জেল থেকে বের করার জন্য বারবার আদালত পাড়ায় ও আইনজীবীর চেম্বারে গেছেন কিন্তু কখনো স্বামীর মুক্তির জন্য স্বৈরাচারী সরকারের সাথে, অপশক্তির সাথে আপোষ করেন নি।

বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা আন্দোলনে ভীত হয়ে স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার তাঁকে ফাঁসি কাষ্টে ঝোলানোর জন্য আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় গ্রেফতার করে জেলে পুরে। এদিকে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা নেতাকর্মীদের নিয়ে এমন তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলেন যার ফলে সরকার বাধ্য হয় বিরোধী দলীয় নেতাদের সাথে গোলটেবিল আলোচনায় বসতে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া সেই গোলটেবিল বৈঠক অর্থহীন হবে বিধায় আইয়ুব খান বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিতে চান। এদিকে আওয়ামীলীগের প্রথম সারির নেতারাও বঙ্গবন্ধুর প্যারোলে মুক্তির জন্য রাজি। কিন্তু বাদ সাধলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব। তিনি খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে যান জেলে। বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করে তিনি জানতে চান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি নিয়ে জেল থেকে বেরিয়ে আসতেছেন কি না ? বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেই নি। তখন বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে বলেন,- “তুমি মুক্তি পেলে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশী খুশি হবো আমি। কিন্তু আমি বলছি তুমি প্যারোলে মুক্তি নিয়ে জেল থেকে বের হবে না। সরকার যদি তোমাকে বেকসুর খালাস দেয় তো বের হবে, নতুবা বের হবে না এটা আমার সাফ কথা।” বঙ্গবন্ধু তাঁর কথায় রাজি হলেন, তিনি প্যারোলে মুক্তি নিলেন না। পরে সরকার বাধ্য হয়ে তাঁকে ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জেল থেকে মুক্তি দেয় এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি পল্টনে ছাত্রনেতারা তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি নিয়ে জেল থেকে বের হতেন তাহলে হয়তো তিনি জীবনে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হতে পারতেন না।
সত্তরের নির্বাচনের পর পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী যখন ক্ষমতা হস্তান্তরে টাল বাহানা শুরু করে তখন শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির আন্দোলন সংগ্রাম। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে জাতির উদ্দেশ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী বক্তব্য রাখবেন। এ নিয়ে তখন পূর্ব পাকিস্তানে টান টান উত্তেজনা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বঙ্গবন্ধুকে বলে দেয়া হয়েছে, তিনি যেন স্বাধীনতা ঘোষনা না করেন। পাকিস্তান সরকার বোমারু বিমান নিয়ে প্রস্তুত বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই রেসকোর্স ময়দানেই বিমান হামলা করবে। এদিকে বাঙালি জাতি উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছেন, বঙ্গবন্ধু কখন আসবেন, কখন স্বাধীনতার ঘোষনা দিবেন। ৭ই মার্চের আগ থেকেই অনেক নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী, বিরোধীদলীয় নেতা বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিচ্ছেন, চাপ দিয়ে যাচ্ছেন- বঙ্গবন্ধু যেন রেসকোর্স ময়দানে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই সময় বঙ্গবন্ধু ছিলেন উভয় সংকটে। রেসকোর্স ময়দানে যাবার আগে বঙ্গবন্ধু তাঁর বেড রুমে গেলেন তাঁর সহধর্মিনী, দুঃখ সময়ের বন্ধু, সাহস ও পরামর্শ দাতা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছার কাছে। বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুকে বলেন,“তোমাকে কে কী বলল সে সবে তুমি কান দিও না, তুমি যা ভালো মনে কর তাই বলবে। মনে রাখবে ইয়াহিয়ার বাহিনী প্রস্তুত হয়ে আছে তোমার বক্তব্যের পর পরই বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য।” বঙ্গমাতার এই সতর্ক বাণী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর জীবনের সবচেয়ে সংকটময় মুহুর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতায় যে সাহায্য করেছিল তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে অতি সতর্কতার সহিত বাঙালি জাতিকে পূর্ণ পরিস্থিতি বর্ণনা করলেন, পূর্ণাঙ্গ দিক নির্দেশনা দিলেন এবং কৌশলে স্বাধীনতার ঘোষণাও দিয়ে দিলেন। অথচ পাকিস্তান সরকার বা তাদের মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ও গণচীন বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা ঘোষনার জন্য দায়ী করতে পারলো না, বাঙালি জাতির উপর ঐ মুহর্তে আক্রমণ করতে পারলো না।

বিধির লিখন না যায় খন্ডন। পাকিস্তানী হায়েনারা ২৫ মার্চ রাতে বাঙালি জাতির উপর অতর্কিত আক্রমণ করে বসে। তবে সেই আক্রমণে পাকিস্তানীরা বিশ্ববাসীর নিকট আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়, বঙ্গবন্ধু বা বাঙালিকে দোষ দিতে পারে নি। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সেই ভাষণ বিশ্বের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একশত ভাষণের মধ্যে প্রথম দশে অবস্থান করেছে এবং ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভূক্ত হয়ে বাঙালি জাতির গৌরব বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী করে রাখে। সেখানে সামরিক আদালতে বিচার করে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। উক্ত কারাগারে তাঁর জন্য কবরও খুড়েঁ রাখা হয়। আর এদিকে বঙ্গমাতা সন্তানদের নিয়ে এ বাড়ি থেকে ও-বাড়ি আশ্রয় নিতে থাকেন। পরে পাকিস্তানী সৈন্যরা তাঁদের গ্রেফতার করে ধানমন্ডির ১৮নং রোডের ১টি বাড়িতে বন্দী করে রাখে। এই বন্দী জীবনেও তাঁকে দুঃখসহ দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তারপরও তিনি ধৈর্য হারান নি। একদিকে হাসপাতালে অসুস্থ শয্যাশায়ী শ্বশুড়-শাশুড়ির সেবা করা, সন্তানদের দেখাশোনা, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জৈষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার প্রথম সন্তান জয়ের জন্ম লাভ, পাকিস্তানী সৈন্যদের গঞ্জনা শোনা, অপরদিকে স্বামী ও দু’পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামালের চিন্তায় মগ্ন- এই সময় তাঁকে একটা অমানষিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে। দীর্ঘ ০৯ (নয়) মাসের বন্দী অবস্থায় যেকোনো মুহুর্তে তাঁর মৃত্যু ছিল অনিবার্য। এভাবে বেগম শেখ ফজিলাতুননেছা রেনু শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি হতে অবদান রেখেছিলেন।
আবারো কবির ভাষায় বলতে হয়:
‘এ বিশ্বে যাহা কিছু মহিয়ান চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’
কবির কবিতার সূত্র ধরে বলতে হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে অবদান রেখেছিলেন তাঁর অর্ধেকের দাবীদার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। এভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে এই মহীয়সী নারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। ইতিহাসের গবেষকরা একদিন নিশ্চয়ই যথাযথভাবে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের মূল্যায়ন জাতির সামনে তুলে ধরবেন।

৮ই আগস্ট এই মহিয়সী নারীর জন্মদিন। তাঁর ৯১ তম জন্মদিনে এই প্রত্যাশা রইল। এই আগস্ট মাসেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। ১৫ই আগস্টের সকল শহীদানের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।


লেখকঃ মোঃ আব্দুল মালিক শিক্ষক, কলামিস্ট। সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, সিলেট জেলা। সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সিলেট জেলা।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মদিন আজ

বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মদিন আজ



কুশিয়ারানিউজ ডেস্কঃ আজ ৮ আগস্ট, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মমতাময়ী মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মদিন। 

১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এই মহীয়সী নারী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে নিষ্ঠুর, বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। মাত্র ৪৫ বছর বয়সে স্বামীর সহযাত্রী হয়ে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। 


তাঁর ডাক নাম ছিল রেনু। ছোটবেলায় বাবা-মাকে হারিয়ে স্বজনদের সঙ্গে বেড়ে উঠেন তিনি। মাত্র ৩ বছর বয়সে বাবা শেখ জহুরুল হক ও ৫ বছর বয়সে মা হোসনে আরা বেগম পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পড়ার সময় দাদা শেখ কাসেম চাচাতো ভাই শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ফজিলাতুন্নেছার বিয়ে দেন। বিয়ের পর সামাজিক রীতিনীতির কারণে স্কুলের বদলে গৃহশিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন তিনি। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছোটবেলা থেকেই গৃহিণী ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের প্রতি তিনি সবসময় দায়িত্বশীল ছিলেন। 


জীবদ্দশায় স্বামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে লড়াই-সংগ্রামের প্রেরণা যুগিয়েছেন। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ তৎকালীন সব সংগ্রামে তিনি গণমানুষের পক্ষে নিজ অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনে সমস্যা-সংকটে তিনি যেমন পরিবারের দায়িত্ব পালন করেছেন পরম মমতায়, তেমনি সাংগঠনিক দায়িত্বও পালন করেছেন যথেষ্ট সাহসিকতার সঙ্গে।

বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে মহীয়সী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব দিকনির্দেশনা দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মী ও অনুসারীদের সক্রিয় রাখতেন। কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও নির্দেশনা নেতা-কর্মীদের জানাতেন। ১৫ আগস্ট বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও বিন্দুমাত্র বিচলিত হননি। হত্যাকারীদের এই জঘন্য কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছেন বিপুল বিক্রমে। 

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বঙ্গবন্ধুর সব সাহসী পদযাত্রায় বেগম মুজিব ছিলেন সক্রিয় সহযাত্রী। আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধু কারারুদ্ধ হবার পরে তার প্যারোলে মুক্তির জন্য সক্রিয় ষড়যন্ত্রটি সফল হতে পারেনি বঙ্গমাতার জন্য। বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির চূড়ান্ত মাহেন্দ্রক্ষণে বঙ্গমাতাই তার জীবনসঙ্গী বঙ্গবন্ধুকে সঠিক পথ বাতলে দিয়েছিলেন। বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে দলের নেতাসহ বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নানা পরামর্শ ও নির্দেশনা ছিল। সেসব নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন দোটানায় তখন স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা মুজিবই তাকে বলেছিলেন, কারো নির্দেশনা বা পরামর্শ নয়, তোমার যা মনে আসে তাই বলো। অন্তরের অন্তস্থল থেকে উৎসারিত ১৯ মিনিটের সে ভাষণটি শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনানুষ্ঠানিক ঘোষণাই ছিল না, পৃথিবীর ইতিহাসের একটি বহুল প্রচারিত ও সেরা ভাষণ হিসেবে বিবেচিত হয়।



মহীয়সী এ নারী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে তাকে। আওয়ামীলীগ, অঙ্গ-সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতীম ও সমমনা সংগঠনগুলোসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করবে বঙ্গমাতাকে।

কুশিয়ারা নিউজ পরিবারও বঙ্গমাতাকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে। বাঙ্গালী নারীর মনে বঙ্গমাতার জীবনাদর্শের সফল প্রতিফলন ঘটুক, মহীয়সী নারীর ৯১তম জন্মদিনে এটাই কামনা। আমরা তাঁর রূহের মাগফেরাত কামনা করছি।