নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আর মাত্র দু’দিন পরেই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে এ আসনে উপ-নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর সকাল আটটা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ। সে হিসেবে ২ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টায় শেষ হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা।
এদিকে নির্বাচন উপলক্ষে এ আসনের ৩ উপজেলায় (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাঁরা নির্বাচনের আগে দুইদিন, পরে দুইদিন ও নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচন কমশিনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ, অপরাধ আমলে নিয়ে সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করতে সিলেটের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রজমান ভূঁঞাকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, অঞ্জন কান্তি দাসকে বালাগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেটের মেট্রোপলিট্রন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়াকে ফেঞ্জুগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিচারকাজ সম্পন্ন করার জন্য তারা ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচদিন নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন। বিচার কাজের জন্য তারা একজন বেঞ্চ সহকারী/স্টেনোগ্রাফার/অফিস সহকারীকে সহকারী হিসেবে সঙ্গে নিতে পারবেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তাদের নিজ নিজ অফিস প্রধানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটরাকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে প্রয়োজনীয় যানবাহন সরবরাহ করার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া সিলেট মেট্রোপলিটন (এসএমপি) কমিশনার এবং সিলেট জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে- দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় আদালত পরিচালনার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সশস্ত্র পুলিশ নিয়োগ করার জন্য।
উল্লেখ্য, সিলেটের দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসন। যার সংসদীয় নং ২৩১। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার ও ভোটকেন্দ্র ১৪৯টি।
চলতি বছরের ১১ মার্চ করোনায় সংক্রমিত অবস্থায় সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটির সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ এর দফা (৪) অনুযায়ী, উক্ত শূন্য আসনে ৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও করোনার কারণে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় শূন্য আসনটিতে ৮ জুন পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করে ইসি। সেই তফসিল অনুযায়ী গত ২৮ জুলাই এই আসনের উপনির্বাচন ইভিএম পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এর দুদিন আগে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন আদালত। পরবর্তীতে ৪ সেপ্টেম্বর ভোটগ্রহণের দিন ধার্য্য করে ইলেকশন কমিশন।
তফশিল ঘোষণার পর থেকেই উত্তাপ ছড়াচ্ছিলো সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচন। প্রার্থীদের কথার লড়াই একসময় প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে গড়ায় মাঠে। আসনজুড়ে প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দেখা দেয় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। চলে মিছিল-মিটিং-শোডাউন। সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও শুরু হয় নির্বাচনকেন্দ্রীক আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু আগস্টের শুরুতে করোনার ঢেউ থামিয়ে দেয় সবকিছু।
এর আগে গত ১৫ জুন মনোনয়ন জমা দেন মোট ৬ জন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাহমিদা হোসেন লুমা ও শেখ জাহেদুর রহমান মাসুম।
এর মধ্যে ফাহমিদা ও মাসুম ছাড়া সবার মনোনয়নপত্র ১৭ জুন বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন অফিস। দাখিলকৃত মনোনয়নে ভোটারদের তথ্য যথাযথ না পাওয়ায় ফাহমিদা ও মাসুমের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরে তারা আপিল করলেও আগের রায় বহাল রাখে নির্বাচন কমিশন। ফলে তারা দুজন ঝরে পড়েন নির্বাচন থেকে।
বহাল থাকা ৪ প্রার্থীর প্রার্থীর মধ্যে ২৫ জুন প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রার্থীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব নৌকা, জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক লাঙ্গল, স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরী মোটরগাড়ি (কার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া ডাব প্রতীক পান। এর মধ্যে শফি আহমদ চৌধুরী ছাড়া বাকি ৩ জন পান দলীয় প্রতীক।