Wednesday, 23 February 2022

বানিগাজীতে পুড়ে যাওয়া বসতঘর পরিদর্শনে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা ও সিলেট জেলা পুলিশ

বানিগাজীতে পুড়ে যাওয়া বসতঘর পরিদর্শনে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা ও সিলেট জেলা পুলিশ



গোলাপগঞ্জের বানিগাজীতে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া সেই বসতঘর পরিদর্শন করেছেন গোলাপগঞ্জ মডেল থানা এবং সিলেট জেলা পুলিশের মোবিলাইজেশন কন্টিনজেন্ট এর অফিসার ফোর্স। মঙ্গলবার রাত ১১টায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের এসআই মোফাখখারুল ইসলামের নেতৃত্বে তারা পুড়ে যাওয়া ঘর পরিদর্শন করেন।

এসময় অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত ঘর পরিদর্শন করে এসআই মোফাখখারুল ইসলাম বলেন, পুড়ে যাওয়া ঘরের ধ্বংসাবশেষ দেখে আমি গভীরভাবে মর্মাহত হয়েছি। ঘরটির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি ঘরের স্বত্বাধিকারীদের সাথে কথা বলে তাদের প্রতি সহানুভূতি জানান।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বানিগাজী গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুল ফয়েজ মাস্টার এবং বুধবারীবাজার ইউনিয়ন যুবলীগের কোষাধ্যক্ষ ও পূবালী ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদের যৌথ ঘরে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় যৌথঘরের ৬টি রুমই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এছাড়া, অগ্নিকাণ্ডের সময় আগুনের ব্যাপকতায় পার্শ্ববর্তী আব্দুল মুহিতের বসতঘরেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে আব্দুল মুহিতের বসতঘরেও আংশিক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এ দুর্ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়া বসতঘরের প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে, হঠাৎ করে এমন দুর্ঘটনায় একমাত্র বসতভিটা হারিয়ে একদম নিঃস্ব হয়ে গেছেন ফয়েজ মাস্টার এবং আব্দুল হামিদের পরিবার। তারা সরকারের বিশেষ সহযোগিতা কামনা করেন।

এছাড়া হঠাৎ করে নিঃস্ব হওয়া পরিবার দুটিকে সরকারী-বেসরকারি পর্যায়ের সহযোগিতার প্রয়োজন বলেও মনে করেন সমাজের সচেতন মহল।
গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ মটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত

গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ মটরসাইকেল আরোহী গুরুতর আহত

প্রতীকী ছবি

গোলাপগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ মটরসাইকেল আরোহী যুবক গুরুতর আহত হয়েছেন।  

মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা পরিষদের সামনের ঢাকাদক্ষিণ-গোলাপগঞ্জ সড়কে এ ঘটনাটি। তাৎক্ষণিক আহতদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। তবে এই তিন যুবকের বিয়ানীবাজার উপজেলায় বলে জানা গেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপজেলা পরিষদের সামনের ঢাকাদক্ষিণ-গোলাপগঞ্জ সড়কে নতুন কালভার্ট নির্মাণে পুরনো কালভার্ট ভেঙ্গে একটি বড় গর্ত খুড়া হয়েছে। যানবাহন চলাচলের জন্য রাস্তার সাইটে একটি রাস্তা মাটি ভরাট করে তৈরী করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে গোলাপগঞ্জ থেকে আসা একটি দ্রুত গতির মটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণে হারিয়ে এই গর্তের মধ্যেই পড়ে যায়। এতে মটরসাইকেলে থাকা ৩ জন আরোহী গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিক স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রেরণ করা হলে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। 
 
সড়ক দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জুয়েল আহমদ নামের এক স্থানীয় ব্যবসায়ী। তিনি জানান, মটরসাইকেলের যে যুবক চালাচ্ছিল তার অবস্থা বেশি আশংকাজনক। 


সূত্রঃ জিভয়েস২৪
 কুলাউড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে পথশিশুর পা বিচ্ছিন্ন

কুলাউড়ায় ট্রেনে কাটা পড়ে পথশিশুর পা বিচ্ছিন্ন

কুলাউড়া রেলস্টেশনে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে ডান পা হারিয়েছে ১০ বছরের এক পথশিশু। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ওই শিশুটি স্টেশন এলাকায় থাকে। তাৎক্ষণিক তার নাম জানা যায়নি। 

বিষয়টি নিশ্চিত করে কুলাউড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মুহিব উদ্দিন আহমদ জানান, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে চট্টগ্রামগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুলাউড়া রেলস্টেশনে ঢুকছিল। এ সময় রেললাইনে রাখা একটি বোতল কুড়াতে যায় ওই পথশিশুটি। স্টেশনে ট্রেন ঢুকায় লোকজন চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাধা দিলেও বোতলটি কুড়াতে গিয়ে পথশিশুটির ডান পা ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে যায়। 

পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাকে সিলেট হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।

Monday, 21 February 2022

কাল থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

কাল থেকে খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা

ফাইল ছবি

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি)। আগামীকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সশরীরে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হচ্ছে।

তবে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে চলবে এ বিষয়ে গাইডলাইন প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ ২০ নির্দেশনা দিয়ে একটি আদেশ জারি করেন।

নির্দেশনাগুলো হলো-

১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে সকল শিক্ষার্থী কোডিড-১৯ টিকার ২য় ডোজ গ্রহণ করেছে সে সকল শিক্ষার্থী সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।

২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়সমূহ ব্যানার বা অন্য কোনো উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।

৩. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পথে সকল শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করা।

৪. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন-ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।

৫. শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণকৃত অ্যাসাইনমেন্টসমূহের কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে।

৬. শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন ইতোপূর্বে প্রেরিত নির্দেশনা মোতাবেক প্রণয়ন করতে হবে।

৭. শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশ-প্রস্থান মুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা। যদি কেবল একটি প্রবেশ-প্রস্থান মুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশ-প্রস্থান মুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা।

৮. প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করা।

৯.প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সেই বিষয়ে তাদেরকে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং প্রদান করার ব্যবস্থা করা।

১০. প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখা।

১১. প্রতিষ্ঠানের সকল ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করা।

১২. প্রতিষ্ঠানের সকল ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখা।

১৩. প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ অন্য কেউ প্রবেশ-অবস্থান-প্রস্থানের সময় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা।

১৪. প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এবং অন্য কেউ সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করা।

১৫. প্রতিষ্ঠানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা।

১৬. শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে পারস্পরিক ৩ (তিন) ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করা।

১৭. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা।

১৮. প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করা।

১৯. প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করা।

২০. প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

প্রসঙ্গত, করোনা বেড়ে যাওয়ায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত ২১ জানুয়ারি থেকে বন্ধ আছে। এই ছুটি ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

উল্লেখ্য, দেশে প্রথমবার করোনা সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে দেড় বছর পর ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর খুলে দেওয়া হয় প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও চালু হয়। 
ইউক্রেন সীমান্তে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করল রাশিয়া'

ইউক্রেন সীমান্তে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করল রাশিয়া'


রোস্তভ প্রদেশের ইউক্রেন সীমান্ত দিয়ে রাশিয়ার প্রবেশ করার চেষ্টা করা ইউক্রেন সেনাবাহিনীর একটি দলকে ঠেকিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। 

রাশিয়ার গণমাধ্যম ইন্টারফ্যাক্স দেশটির সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, নাশকতা করতে রাশিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা চালায়  ইউক্রেনের সেনাদের একটি দল।  তাদের ঠেকাতে গুলি ছোড়া হয়। এ ঘটনায় ইউক্রেনের পাঁচ অনুপ্রবেশকারী নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে রাশিয়ার দক্ষিণ ফেডারেল বিভাগ।  

এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা আগে রাশিয়ার ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছিল, দক্ষিণ-পূর্ব রোস্তভ প্রদেশের সীমান্তে থাকা তাদের একটি স্থাপনা ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে পুরোপুরি ধসে পড়েছে।  যেখানে হামলা চালানো হয়েছে সেখান থেকে ১৫০ মিটার দূরে ইউক্রেনের সীমান্ত। 

তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দুটি ঘটনাই মিথ্যা বলে দাবি করা হয়েছে।  দেশটির পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, রাশিয়ায় নাশকতা চালাতে ইউক্রেনে কোনো দল যায়নি। 

তাছাড়া ইউক্রেনের সেনাবাহিনী কোনো গোলা ছোড়েনি। 

এদিকে রোস্তভের এ ঘটনাকে বেশ গুরুতর মনে করা হচ্ছে।  কারণ রাশিয়ার সেনাবাহিনী সরাসরি ইউক্রেনকে দায়ি করেছে। এর আগে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা এরকম অভিযোগ করে আসছিল। 


সূত্র: আলজাজিরা, ইন্টারফ্যাক্স 
রায়হানের পর সিলেটে ফের পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগঃ যুবকের মৃত্যু

রায়হানের পর সিলেটে ফের পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগঃ যুবকের মৃত্যু


সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পুলিশের নির্যাতনে এক ব্যক্তির মৃত্যুর অভিযোগ ওঠেছে। এমন অভিযোগ তুলে সড়ক অবরোধ করেছে এলাকাবাসী।

মারা যাওয়া যুবকের নাম উজির মিয়া (৪০)। তার বাড়ি উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মৃত কাঁচা মিয়ার ছেলে।

সোমবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান উজির মিয়া। এর পর দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাগলাবাজার এলাকায় স্থানীয় লোকজন সড়কে লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন এলাকাবাসী।

সেখানে তার লাশ রেখে এলাকাবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এসময় রাস্তায় নামে স্থানীয় হাজারো মানুষ।

মরদেহ সড়কে রেখে সড়ক অবরোধের কারণে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। অবরোধস্থল স্থানীয় পাগলাবাজার এলাকার উভয় পাশে সড়কে দীর্ঘ প্রায় ১০ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

এদিকে অবরোধকারীদের শান্ত করতে শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনোয়ারুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে তোপের মুখে পড়েন। পরে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তিনি।

এসময় ইউএনওর গাড়ি লাশের ওপর দিয়ে চলে গেছে- এমন কথা প্রচার হলে স্থানীয় জনতা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। যদিও এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এলাকাবাসী প্রতিবাদ সমাবেশে বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার রাতে শান্তিগঞ্জ উপজেলার শত্রুমর্দন গ্রামের উজির মিয়াকে থানার এসআই দেবাশীষ, এসআই প্লাটন কুমার সিংহ ও এএসআই আক্তারুজ্জান তাকে নিজ বাড়ি থেকে সন্দেহজনক আটক করে থানায় নিয়ে যায়। থানায় নিয়ে তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়।

পরের দিন বুধবার তাকে সুনামগঞ্জ আদালতে নিয়ে যাওয়া হলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। পরে গুরুতর আহত উজির মিয়াকে প্রথমে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
 
মৃত উজির মিয়ার ছোট ভাই ডালিম মিয়া জানান, তার ভাইকে পুলিশ ধরে নিয়ে থানায় নির্যাতন করে। পরদিন তাকে একটি চুরির মামলায় আদালতে পাঠালে জামিনে মুক্ত হন। এরপর থেকে উজির মিয়া গুরুতর অসুস্থ হন। এ অবস্থায় সোমবার সকালে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

উজির মিয়ার ভাতিজা ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান বলেন, আমার চাচাকে চুরি মামলা দিয়ে আটক করে থানা হাজতে নিয়ে নির্মমভাবে মারধর করেছে। আমরা সঙ্গে সঙ্গে শান্তিগঞ্জ থানাকে নির্যাতনের কথা জানাই। তারা বিষয়টি দেখি দেখছি করতে আমার চাচার মৃত্যু হয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, শান্তিগঞ্জ থানার এসআই দেবাশীষ ও এসআই প্লাটন কুমার সিংহ  তার চাচার ওপর অমানবিকভাবে নির্যাতন করেছেন। চাচা জামিন পেয়ে পরিবারের কাছে পুলিশি নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন।

উজির মিয়ার পরিবার ও তার স্বজনরা এ ঘটনায় শান্তিগঞ্জ থানার এসআই আলাউদ্দিন, এসআই দেবাশীষ, এসআই প্লাটন কুমার সিংহের বিচারের দাবি জানান। অবরোধ চলাকালে স্থানীয়রা এসব পুলিশ অফিসারদের গ্রেফতারেরও দাবি জানান।

অবরোধ-বিক্ষোভের খবর খবর পেয়ে সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার-উল-হালিম ঘটনাস্থলে যান। তাদের হস্তক্ষেপে বিকাল ৫টার দিকে বিক্ষুব্ধ লোকজন সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করেন।

এদিকে উজির মিয়ার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণের জন্য নেওয়ার সময় তার সুরতহাল সবার সামনে করার দাবি জানান বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। পরে সবার সামনে তার সুরতহাল করা হয় বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা  জানিয়েছেন, উজির মিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনে চিহ্ন রয়েছে- যা তারা ভিডিও করে রেখেছেন।

এ বিষয়ে শান্তিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মুক্তাদীর হোসেনের বক্তব্যের জন্য তার মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে গিয়ে বলেন, ওই ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিচার হবে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শান্তিগঞ্জের ইউএনও আনোয়ারুজ্জামান বলেন, উজির মিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে সড়ক অবরোধ করে। তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য ওখানে গিয়েছিলাম আমি। লোকজন আমার ওপর চড়াও হলে আমি দ্রুত ওখান থেকে চলে আসি। আমার গাড়ি লাশের ওপর দিয়ে আসেনি।

সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, আসামিকে আটক করা হয়েছিল ৯ ফেব্রুয়ারি। একদিন হাজতে রেখে পরে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি চলে যান। এরপর কোনো একদিন হয়তো তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। শুনেছি আজকে সকালে নাকি তার মৃত্যু হয়েছে।

স্থানীয়দের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ও তাদের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু সাঈদ ঘটনাস্থলে গেছেন। তিনি না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে পারছি না।
বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী

বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার চেষ্টা চলছে: প্রধানমন্ত্রী


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা করার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করেছি। নৃ-গোষ্ঠিদের ভাষা ও বর্ণমালাকে বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করার জন্য ২০১৭ সাল থেকে তাদের ভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করেছি। এবছর তাদের নিজস্ব ভাষায় প্রায় ৩৩ হাজার বই বিতরণ করেছি। আমরা বাংলাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সোমবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ‘মহান শহিদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২’ উপলক্ষে রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দেওয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বহুভাষায় জ্ঞানার্জন: সংকট এবং সম্ভাবনা’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির মুক্তি-সংগ্রামের ইতিহাসে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই একটি অসম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠনের ভিত রচিত হয়েছিল।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনে বাঙালি কৃতি সন্তানদের চরম আত্মত্যাগের মাধ্যমেই বাঙালি জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা থেকে শুরু করে পূর্ব বাংলার মানুষের জন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে ধারণ করে গত ১৩ বছরে দেশের আর্থ-সামাজিক খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেছি।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করেছি। সম্প্রতি আমরা ‘এসডিজি প্রোগ্রেস অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছি। আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছি এবং মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। রূপকল্প-২০৪১ অর্জনকে সামনে রেখে দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। আমরা ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ বাস্তবায়ন করছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, অচিরেই আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত, সমৃদ্ধ ও আত্মমর্যাদাশীল ‘সোনার বাংলাদেশ' প্রতিষ্ঠা করব।
 
বাণীতে ‘মহান শহীদ দিবস’ এবং ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উপলক্ষে বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির মানুষের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ইউনেস্কো ২০০০ সাল থেকেই এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে। আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ন্যায়সঙ্গত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।
 
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৫২ সালের এ দিনে আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণোৎসর্গ করেছিলেন আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, রফিকউদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমানসহ আরও অনেকে। আমি বাংলাসহ বিশ্বের সব ভাষা-শহিদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। সেই সঙ্গে পরম শ্রদ্ধায় স্মরণ করি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্বদানকারী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব ভাষাসৈনিকদের, যাদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ এবং সংগ্রামের বিনিময়ে আমাদের মা, মাটি ও মানুষের মর্যাদা সমুন্নত হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা সব দাপ্তরিক কাজে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশ দেন। তিনি সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করেন। বাংলায় জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দিয়ে আমাদের মাতৃভাষাকে বিশ্ব সভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারের ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে কানাডা প্রবাসী রফিক এবং ছালাম নামে দু’জন বাংলাদেশি কয়েকজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সদস্য মিলে ‘মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটি’ গঠন করে। ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ উদযাপনের জন্য জাতিসংঘে প্রস্তাব প্রেরণ করে। জাতিসংঘ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি ইউনেস্কোতে প্রেরণ করার পরামর্শ দেয়।
 
তিনি বলেন, আমরা দ্রুত মাতৃভাষা সংরক্ষণ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে ১৯৯৯ সালের ৯ অক্টোবর ইউনেস্কোকে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি পুনরায় প্রেরণ করি। ফলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আমরা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেছি। বিলুপ্তপ্রায় ভাষা সংরক্ষণ ও তাদের মর্যাদা রক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ বাঙালির গৌরবময় ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যুগে যুগে আমাদের জাতীয় জীবনে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে। জাতির পিতা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে বার বার কারাবরণ করেছেন। ১৯৪৭ সালের ২৭ নভেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত শিক্ষা সম্মেলনে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা করার সিদ্ধান্ত হয়।
 
তিনি বলেন, ঢাকায় এ খবর পৌঁছামাত্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনের সামনে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে। এর কিছুদিন পরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র শেখ মুজিব তার সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ঢাকায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি গণপরিষদের প্রথম অধিবেশনে কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে গণপরিষদের ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে এক সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে খাজা নাজিমুদ্দিন আইন পরিষদে ঘোষণা দেয়, পূর্ব বাংলার জনগণকে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নিতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, নাজিমুদ্দিনের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্রলীগ, তমুদ্দিন মজলিস ও অন্যান্য দলের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১১ মার্চের ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে শেখ মুজিবসহ অনেক ভাষাসৈনিক সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার হন এবং ১৫ মার্চ মুক্তি পান। মুক্তি পাওয়ার পরদিন অর্থাৎ ১৬ মার্চ শেখ মুজিবের নেতৃত্বে পুনরায় ছাত্ররা প্রাদেশিক পরিষদ ভবন ঘেরাও করে, সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জে অনেকেই আহত হন। জিন্নাহ ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে উর্দুর পক্ষে বক্তব্য রাখে এবং ২৪ মার্চ কার্জন হলে আয়োজিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলে ঘোষণা দিলে ছাত্ররা তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করে।

তিনি বলেন, ভাষা আন্দোলনকে জাতীয় আন্দোলনে রূপদান করতে শেখ মুজিব দেশব্যাপী সফরসূচি তৈরি করে ব্যাপক প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন এবং সভা-সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর থেকে গ্রেফতার হন এবং ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবার গ্রেফতার হয়ে জুলাই মাসে মুক্তি পান। এরপর তিনি ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হলে ১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান।
 
শেখ হাসিনা বলেন, শেখ মুজিব ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্তরীণ থেকেও ভাষাসৈনিক ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন এবং আন্দোলনকে বেগবান করতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ তিনজন দূত মারফত খবর পাঠান, ২১ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী হরতাল ডাকতে হবে এবং মিছিল করে ব্যবস্থাপক পরিষদের সভাস্থল ঘেরাও করতে হবে। ৪ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের মিছিল শেষে এই ঘোষণা জানিয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে শেখ মুজিব আমরণ অনশন ঘোষণা করলে ১৬ ফেব্রুয়ারি কারা কর্তৃপক্ষ তাকে ঢাকা থেকে ফরিদপুর জেলে স্থানান্তরিত করে।তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব-বাংলা ব্যবস্থাপক পরিষদের বাজেট অধিবেশনের জন্য নির্ধারিত ছিল। শেখ মুজিবের পরামর্শ ও নির্দেশ অনুযায়ী ওইদিন সারা দেশে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মুসলিম লীগ সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা শহরে এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি এবং সব সভা, সমাবেশ, মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
 
শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমবেত ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে এবং সেখানে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালালে কতগুলো তাজা প্রাণ নিমেষেই ঝরে যায়, অনেকে আহত হন, অনেকে গ্রেফতার হন। প্রাদেশিক পরিষদের কয়েকজন সদস্য অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালিত হয়। নিরুপায় হয়ে সরকার সেনাবাহিনী তলব করে, কারফিউ জারি করে এবং প্রাদেশিক পরিষদে বাংলা ভাষার প্রস্তাব গ্রহণ করে।
 
তিনি বলেন, ১৯৫৪ সালের ৮ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। আওয়ামী লীগ সদস্যগণ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। এরই মধ্যে ৩০ মে পাকিস্তানের গভর্নর ৯২(ক) ধারা জারি করে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভাকে ভেঙে দেয়। শেখ মুজিবসহ সব নেতা গ্রেফতার হন।
 
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় মন্ত্রিসভা গঠন করে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়, প্রথম ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। সেই সরকারই শহীদ মিনার তৈরি, বাংলা একাডেমি থেকে সাহিত্য-বিজ্ঞানের বই প্রকাশ এবং বাংলা টাইপ-রাইটার উদ্ভাবনের জন্য প্রথম প্রকল্প গ্রহণ করে। দুর্ভাগ্য, ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারির ফলে সেই আকাঙ্ক্ষাগুলো আর পূরণ হয়নি।