Saturday 25 September 2021

শৈশবে টিভিতে খেলার স্বপ্ন দেখতেন বোলিংয়ে আগুন ঝরানো গোলাপগঞ্জের আকসার (ভিডিও)



কথা শুনতে ও বলতে পারেন না, তবুও প্রতিপক্ষের ধরাশায়ী পেসার আকসার এখন দেশজুড়ে আলোচনায়। তার আলোচনায় আসার প্রধান কারণ ১৩৮ প্লাস গতিতে বল করতে পারার ক্ষমতা, সঙ্গে আছে স্ট্রেট আর্মে বোলিং দক্ষতা। সব কিছু মিলে একজন আদর্শ পেসারের প্যাকেজ বলা যেতে পারে তাকে।

যমুনা টিভি, বিবিসি নিউজ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে আকসারের ধরাশায়ী বর্ণনা। আর কুশিয়ারা নিউজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে কে সেই আকসার?


আকসার আহমদ, বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা তীরবর্তী বাদেপাশা ইউনিয়নের মোল্লারচক গ্রামে। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুর রহিম, মাতা দিলারা বেগম। আকসারের বয়স যখন মাত্র ২বছর তখনই পিতৃহারা হন তিনি। পরিবারে ১ বোন ও ২ ভাইয়ের মধ্যে আকসার সবার ছোট। সে ও তার ভাই দু'জনেই জন্ম থেকে বাক-প্রতিবন্ধী। অথচ নিজের অসাধারণ পারফর্ম্যান্সে আকসার তার প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে দেশ-বিদেশে অর্জন করেছেন সুনাম।

আকসারের ক্রিকেট খেলা শুরু হয় তার গ্রাম মোল্লারচক থেকেই। শৈশবে মোল্লারচক টিমের একজন সদস্য হিসেবেই খেলতেন আকসার। খেলার প্রতি অসম্ভব আগ্রহ থাকায় শৈশব থেকেই আকসারের স্বপ্ন ছিলো টিভিতে খেলার। তার সকল স্বপ্ন পূরণে সর্বদা সহযোগিতা করে এসেছেন মা দিলারা বেগম। একই সাথে বিভিন্ন সহযোগিতা করেছেন আকসারের এক চাচা আজিজ আহমদও।

আজিজ আহমদ কুশিয়ারা নিউজকে জানান, আকসার যখন সবে ৯ম শ্রেণীর ছাত্র তখন সে জয়েন করে সিলেটের রাগীব-রাবেয়া স্পোর্টস একাডেমিতে। এখান থেকেই স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে চলার পথ শুরু হয় তার। আকসার তার অসাধারণ পারফর্ম্যান্সে একে একে খেলতে থাকেন সিলেট ডিভিশন টিমে,  ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (ডি.ই.এ.এফ) সাইনরাইজ-হায়দ্রাবাদ টিমের হয়ে এবং বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী জাতীয় টিমের খেলোয়াড় হয়ে। প্রত্যেকটিতেই তার অসাধারণ পারফর্ম্যান্স যুক্ত হতে থাকে নিজের ক্যারিয়ারে।

এমনকি নিজের পারফর্ম্যান্সে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকেও আকসার অর্জন করেছেন সংবর্ধনা।

আকসারের মা দিলারা বেগম কুশিয়ারা নিউজকে বলেন, আকসার তার নিজ স্বপ্ন পূরণে নিজের অধ্যবসায় রেখে সামনের পানে এগিয়ে চলেছে। আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব তাকে সাপোর্ট দিয়ে আসছি। আকসার যেনো আরোও অনেকদূর এগিয়ে গিয়ে নিজ এলাকা এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে সেই প্রত্যাশা রেখে তিনি সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেছেন।

আকসারের পারফর্ম্যান্সঃ
(যমুনা টিভির সৌজন্যে)

কথা বলতে ও শুনতে না পারা আকসার খেলার মাঠে সতীর্থদের অনেক কিছু বোঝাতে না পাড়লেও কোচের ইশারায় ইনসুইং আর আউট সুইংয়ে ব্যাটসম্যানকে পরাস্থ করতে কোনো সমস্যা হয় না তার। 

ইনসুইং, আউটসুইং, বাউন্স, গতি, ভ্যারিয়েশন- সবকিছু মিলিয়েই দারুণ দক্ষতা রয়েছে তার। একজন ভালো ব্যাটারকে বিভ্রান্ত করতে যা প্রয়োজন সবই বিদ্যমান তার মাঝে।

আকসারের প্রতি দশ বলের তথ্য নিলে দেখা যায়, ৫টি বল ব্যাটারের ব্যাটেই লাগছে না। ৩ টি বল খেলতে ব্যাটার নিচ্ছেন রক্ষণাত্মক কৌশল, না হলে পড়তে হচ্ছে মুশকিলে। আর বাকি দুই বলে আকসার উপড়ে ফেলছেন স্ট্যাম্প কিংবা ফেলছেন এলবিডব্লিউর ফাঁদে।

১৩৮ এর বেশি গতিতে বল করতে পারেন ৬ ফিট ১০ ইঞ্চি উচ্চতার আকসার। এতসব থাকা এই পিতৃহীন আকসারের মুখে নেই ভাষা, অন্য শব্দে আকসার একজন বাকপ্রতিবন্ধী।

কোচের ইশারায় ঠিক জায়গা মতই বলগুলো করছেন। ইশারাতেই বুঝছেন ইনসুইং কিংবা আউট সুইংয়ের নির্দেশনা।

একাত্তর একাডেমির কোচ হাফিজ মোহাম্মদ সোহেল বলেন, সব ধরনের বলই করতে পারে আকসার। অফ কাটার, লেগ কাটার, ইয়র্কার সবই তার দখলে। তার মূল শক্তি আউট সুইং। ইনসুইংয়ে এখনও কিছুটা দুর্বলতা আছে।

সিলেট থেকে উঠে আসা আকসারের ধ্যানজ্ঞানজুড়ে শুধুই বোলিং, বোলিং আর বোলিং। সবকিছু মিলিয়ে তার খাবারের নাম বোলিং, তার ঘুমের উপাদানও বোলিং। সারাক্ষণই চলে ক্রিকেট বিশ্লেষণ আর পর্যবেক্ষণ। তার সময় কাটে বিশ্বসেরা নামীদামি সব পেসারের বোলিং দেখে।

একজন পেস বোলারের যে যে গুণ থাকা প্রয়োজন তার সবই আছে। স্রষ্টা প্রদত্ত গুণগুলো আছে একটু বেশিই। তবু এখন পর্যন্ত ডাক পাননি বিসিবি বা কোনো ক্লাব থেকে। যার অন্যতম কারণ মুখের ভাষা। কিন্তু যার কাছে ক্রিকেটের সব ব্যাকরণ ও সব ভাষাই জানা, তার কাছে মুখের ভাষা কি আদৌ কোনো সমস্যা?

ভিডিওঃ


শেয়ার করুন