Thursday, 1 July 2021
সেনাদের টহলঃ জনশূন্য বিয়ানীবাজারের রাস্তাঘাট
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে যান ও জনশূণ্য অবস্থায় রয়েছে বিয়ানীবাজারের রাস্তাঘাট। ব্যস্ততম সড়কগুলোও রয়েছে ফাঁকা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ। পৌরশহরসহ উপজেলাজুড়ে এমনই চিত্র দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সেনাবাহিনী ও বিজিবির একাধিক টিম লকডাউন কার্যকরে মাঠে কাজ করছে। সকাল থেকে উপজেলাজুড়ে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে টহল দিতে দেখা গেছে।
এছাড়া বারইগ্রাম-সিলেট আভ্যন্তরীন সড়কসহ সবকটি সড়কের বিয়ানীবাজার অংশে চলছে না কোনো গণপরিবহন। জরুরি সেবার আওতাভুক্ত কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে। তারপরও পরিচয়পত্র যাচাই-বাছাই করে ছাড়ছে ট্রাফিক পুলিশ। সীমিত লকডাউনে মোটরসাইকেল চলতে দেওয়া হলেও এখন তা চলতে দেওয়া হচ্ছে না। রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা রয়েছে। বৃহস্পতিবার (০১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিয়ানীবাজারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান জানান ‘সকাল থেকে কোনো গণপরিবহন চলতে দেওয়া হচ্ছে না। জরুরি প্রয়োজনে কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করছে’। বিয়ানীবাজার পৌরশহরসহ উপজেলায় সর্বমোট পাঁচটি প্রবেশমুখে পুলিশের চেকপোস্ট থাকছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে পুলিশের একটি টিম সহযোগিতা করছে। পাশাপাশি উপজেলাজুড়ে পুলিশের দুটি মোবাইল টিম সক্রিয় রয়েছে।
বিয়ানীবাজার পৌরশহর ও উপজেলার বারইগ্রাম বাজারে পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশিক নূর ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) মুশফিকীন নূর। তারা বলেন, জেলা প্রশাসকের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। বিনা প্রয়োজনে কাউকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। তারা আরও বলেন, বিয়ানীবাজারে কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা উপজেলা প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন।
কঠোর লকডাউনে যান ও জনশূন্য সিলেটের সড়ক
ডেস্ক নিউজঃ করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাত দিনের জন্য দেশজুড়ে 'কঠোর' বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে কার্যকর হওয়া এই লকডাউন চলবে আগামী ৭ জুলাই পর্যন্ত। এবারের লকডাউনে সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ 'কঠোর'ই করার ইঙ্গিত মিলেছে। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলেই গ্রেপ্তার করার কথা বলেছে পুলিশ। বিধিনিষেধ মানতে বাধ্য করতে মাঠে থাকছে সেনাবাহিনীও।
কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে যান ও জনশূণ্য অবস্থায় রয়েছে সিলেটের রাস্তাঘাট। ব্যস্ততম সড়কগুলোও রয়েছে ফাঁকা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাসা-বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না মানুষ।
নগরীর প্রবেশদ্বার ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়েছে পুলিশ। এছাড়া লকডাউন বাস্তবায়নে রাস্তায় টহল দিচ্ছে র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে নগরীর রাস্তা-ঘাট ফাঁকা। মাঝে-মধ্যে ২/১টি রিক্সা চলাচল করলেও যন্ত্রচালিত যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ১১টার পর নগরীর বিভিন্ন সড়কে সেনা সদস্যদের টহল দিতে দেখা যায়। লকডাউনের প্রচারণায় নগরীতে সিলেট সিটি কপোরেশনের উদ্যোগে সকাল থেকে নগরীতে মাইকিং করা হচ্ছে।
সকালে সিলেট নগরীর বেশ কয়েকটি সড়ক ঘুরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের চিত্র দেখা গেছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে; চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় কাউকে থাকতে দিচ্ছে না তারা
সড়কে থামিয়ে কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন- এমন সব প্রশ্নের পর যৌক্তিক জবাব দিতে পারলেই সাধারণ মানুষকে গন্তব্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে। না হয় ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সবাইকে। রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না। চলছে ব্যক্তিগত, অফিসের গাড়ি। রিকশা চালু আছে। অনেকেই গন্তব্যে যাচ্ছেন পায়ে হেঁটে।
এর আগে গত রোববার বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়েও সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সমন্বয়হীনতায় তা পিছিয়ে যায়। এই সময়ে ঢাকা থেকে গ্রামে এবং গ্রাম থেকে হাজার হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেছে। বুধবার শেষ দিনেও মানুষের এ চলাচল অব্যাহত ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা গেছে।
জরুরি সেবা ছাড়া সব দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত, শিল্প কারখানা, যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে৷ আর্থিকসহ অন্যান্য সেবা দেয়ার প্রয়োজনে কিছু অফিস সীমিত আকারে খোলা থাকবে৷ তবে পোশাক কারখানা খোলা থাকবে।
সরকারি বিধিনিষেধ এবং মানুষের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকবে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও সেনাবাহিনী। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এই সময়ে বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। পুলিশ জানিয়েছে, বিনা কারণে বাড়ির বাইরে বের হলেই গ্রেফতার করা হবে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিধিনিষেধের কঠোর প্রয়োগ চান জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের অভিমত, যে 'কঠোর' লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে, সেটি যেন কঠোরই হয়। জীবন রক্ষার স্বার্থেই এ ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি যাতে পরিকল্পনা মাফিক ও বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে করা হয়, সেদিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে দরিদ্র, শ্রমজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তার ব্যবস্থা থাকতে হবে। অন্যথায় ভোগান্তি বাড়বে, কিন্তু কাজের কাজ হবে না।
এর আগে গত ২৪ জুন কভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির পক্ষ থেকে সারাদেশে ১৪ দিনের 'শাটডাউনের' সুপারিশ করা হয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া ও জনজীবন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করে কমিটি। এ ব্যবস্থা কঠোরভাবে পালন করতে না পারলে সব প্রস্তুতি থাকার পরও স্বাস্থ্যব্যবস্থা অপ্রতুল হয়ে পড়বে বলেও সতর্ক করা হয় কমিটির পক্ষ থেকে।
এরপর ২৫ জুন রাতে প্রেসনোট জারি করে ২৭ জুন থেকে সারাদেশে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। কিন্তু পরদিন রাতে বৈঠকে তা পিছিয়ে আজ বৃহস্পতিবার থেকে করার সিদ্ধান্ত আসে।
তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সমকালকে বলেন, অর্থবছরের শেষ সময়ে অর্থ ছাড় করাসহ বিভিন্ন বিষয় থাকে। এ কারণে ২৭ জুন থেকে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে সমস্যা হতো। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আপাতত সাত দিনের জন্য এটি কার্যকর থাকবে। তবে প্রয়োজন মনে করলে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরও বাড়ানো হবে।
যা বন্ধ থাকবে : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। এসব বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীও মাঠে থাকবে। সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহনসহ সব ধরনের যন্ত্রচালিত যানবাহন এবং অভ্যন্তরীণ উড়োজাহাজ চলাচল বন্ধ থাকবে। শপিংমল, মার্কেটসহ সব দোকানপাট এবং পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করা যাবে না। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার) ছাড়া কেউ কোনোভাবে ঘরের বাইরে বের হতে পারবে না। নির্দেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যা খোলা থাকবে : আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা (কৃষিপণ্য-উপকরণ-খাদ্যশস্য-খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্ব্বাস্থ্যসেবা, করোনা টিকাদান, রাজস্ব আদায় কার্যাবলি, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাস-জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন, ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তাব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি, ফার্মাসিউটিক্যালসসহ জরুরি পণ্য-সেবার সঙ্গে সংশ্নিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে)। পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ, স্থল) ও সংশ্নিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। কাঁচাবাজার-নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইনে কেনা বা খাবার নিয়ে যাওয়া) করতে পারবে। আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে। বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ধর্ম মন্ত্রণালয় তাদের সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করেছে। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত সোমবার থেকেই সারাদেশে গণপরিবহন, শপিংমল, মার্কেটসহ বেশ কিছু কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।
Wednesday, 30 June 2021
এক দশকে বসবাস অযোগ্য হবে সিলেটঃ নতুন গবেষণা
সম্প্রতি এক আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে আগামী এক দশকের মধ্যে সিলেট মহানগরী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের মোট ছয়জন গবেষকের গবেষণাপত্রটি আন্তর্জাতিক সাময়িকী ‘সাসটেইনেবল সিটিজ অ্যান্ড সোসাইটি’তে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয় অত্যধিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এ মহানগরীতে কঠিন হয়ে পড়বে মানুষের বসবাস।
শুধু সিলেট মহানগরীই নয়, একই শঙ্কা ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা মহানগরীর জন্যও প্রকাশ করা হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, অস্বাভাবিক জনঘনত্ব, কংক্রিটের বাড়িঘর, এয়ারকন্ডিশনিং, কলকারখানার আধিক্য, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, জলাভূমি ভরাট, গাছপালা কেটে ফেলা, যানবাহনের অত্যধিক বৃদ্ধি প্রভৃতির কারণে তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
‘সারফেস আরবান হিট আইল্যান্ড ইনটেনসিটি ইন ফাইভ মেজর সিটিজ অব বাংলাদেশ: প্যাটার্নস, ড্রাইভার অ্যান্ড ট্রেন্ডস’ শীর্ষক গবেষণাপত্রে গবেষকরা বিগত ২০ বছরের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে আমলে নিয়ে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক পর্যবেক্ষণ করেছেন। গবেষণায় প্রায় ৮ হাজার স্যাটেলাইট ইমেজ ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, গ্রামের তুলনায় সিলেট মহানগরীর তাপমাত্রা বিগত কুড়ি বছরে ১ দশমিক ১০ ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এমনিতেই জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সঙ্গে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, এয়ারকন্ডিশনার ব্যবহার বেড়ে যাওয়া, সবুজায়নের অভাব, পরিবেশ ধ্বংসসহ নানা কারণে এখন সিলেটসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন শহরমুখী। মানুষের চাপেও শহরে তাপমাত্রা বাড়ছে। মানুষের শরীরের নিজস্ব তাপমাত্রা রয়েছে, যাকে বলা হয় মেটাবলিক হিটিং। প্রত্যেক ব্যক্তির ক্ষেত্রে এর পরিমাণ ১০০ ওয়াট। শহরাঞ্চলে জনঘনত্বের কারণে এই তাপমাত্রা যুক্ত হচ্ছে পরিবেশের সঙ্গে।
বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে সিলেট মহানগরী বসবাসের অযোগ্য হতে আর মাত্র এক দশক সময় লাগবে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধিরোধে গবেষকরা বেশি করে বৃক্ষরোপণ, সবুজের পরিমাণ বৃদ্ধি, পরিবেশের ক্ষতি না করা, পরিকল্পিত নগরায়ণ, বাড়িঘর তৈরিতে ছিদ্রযুক্ত পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন।
নববধূকে কাঁধে নিয়েই উত্তাল নদী পেরোলেন স্বামী
ডেস্ক নিউজ:: হাতে হাত রেখে একসঙ্গে চলার অঙ্গীকার নিয়ে বসেছিলেন বিয়ের পিঁড়িতে। বিপদে-আপদে একসঙ্গে থাকবেন, দিয়েছিলেন সেই প্রতিশ্রুতিও। মাত্র কয়েকঘণ্টার মধ্যেই তেমন পরীক্ষার মুখোমুখি হন নবদম্পতি।
বলা হচ্ছে ভারতের বিহার রাজ্যের কিষাণগঞ্জের বাসিন্দা শিবকুমারের কথা। সোমবার (২৯ জুন) তার বিয়ে হয় নেপাল সীমান্তের সিংহীমারি গ্রামের মেয়ে সুনীতার সঙ্গে। পরদিন (মঙ্গলবার) নববধূকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হন তিনি।
এরই মধ্যে ওই এলাকায় শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি। বেড়ে যায় গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে চলা পাহাড়ি নদীর স্রোত। নববধূর হাতে হাত রেখে শিবকুমার ঘাটে পৌঁছালে মাঝি জানায়, এই খরস্রোতে নৌকা টানা অসম্ভব। কিন্তু নবদম্পতির তো ফেরার উপায় নেই! সদ্য বিবাহিত শিবকুমার তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন, স্ত্রীকে কাঁধে নিয়েই নদী পার হবেন।
স্ত্রীকে কাঁধে তুলে স্রোত ভেঙে এগোতে লাগলেন শিবকুমার। লক্ষ্য, পার হওয়ার মতো জায়গা খুঁজে বার করা। তখনও পরনে বিয়ের শেরোয়ানি। পায়ে নতুন জুতা। নতুন বৌ সুনীতার পরনে বিয়ের জোড়। হাতবোঝাই চুড়ি ঝুনঝুন করছে চলার তালে তালে। তিনি আর বাধা দেবেন কী!
এভাবে চলতে চলতে চলতে শেষে মিলল নদীর স্রোতা। সেখানে এক কিলোমিটার চওড়া নদীর স্রোতও তুলনায় কম। সেই পানি ঠেলে একসময় তারা গিয়ে ওঠেন বাড়ির কাছে। হইহই করে ওঠে আগে থেকেই খবর পেয়ে পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন।
নদীর বিপদের কথা কিন্তু শিবকুমারের অজানা ছিল না। তিনি বলেন, ‘নদীর গতিপ্রকৃতি ভাল না। কখন কী হবে, কেউ জানে না।’ এ কথা জেনেও স্ত্রীকে কাঁধে নিয়ে পার হলেন কেন? জবাবে সলজ্জ হাসেন নতুন বর। বরযাত্রীরা তখন বলে ওঠেন, ‘ছেলে তো বিয়ের পর প্রথমদিনই বাজিমাত করে দিলো!’
লাজুক হাসি তখন সুনীতার মুখেও।
পারলেন কী করে এতটা পথ নতুন বৌকে কাঁধে করে নিয়ে আসতে? স্রোত ভেঙে হাঁটতে অসুবিধা হল না? মুখে হাল্কা হাসি। ২৬ বছর বয়সী শিবকুমার বলেন, ‘লজ্জা লাগছিল। কিন্তু উপায় তো ছিল না। পানির স্রোত বাড়ছে দেখে মাঝি না করে দিল। আমরা কি তাহলে নদী পেরিয়ে বাড়ি যাব না?’
জাতীয় সংসদে বাজেট পাস
নির্দি'ষ্টকরণ বিল পাসের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট পাস হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার সংসদ অধিবেশন এ বাজেট পাস হয়।
অর্থ'মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পাসের প্রস্তাব করলে কণ্ঠ'ভোটে তা পাস হয়। এরপর সংসদে উপস্থিত সবাই টেবিল চাপড়ে অর্থম'ন্ত্রীকে স্বাগত জানান। এর আগে ৩ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদ অধিবেশনে দীর্ঘ আলোচনা হয়।
বাজেট পাসের পর বুধবারই রা'ষ্ট্রপতি তাতে সম্মতি দেবেন। পরদিন ১ জুলাই নতুন অর্থবছর থেকে তা বাস্তবায়ন শুরু হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের, জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং অর্থ'মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার বাজেট আলোচনা শেষ হয়।
এবারের বাজেটে প্রাধিকার পেয়েছে দেশের প্রা'ন্তিক জনগোষ্ঠী। বাজেটটি করা হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতকে।
পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট ব্যয়ের আকার ধরা হয়েছে ছয় লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।
পরীমনিকে ধর্ষণ চেষ্টায় গ্রেফতার অমি ৩ দিনের রিমান্ডে
পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা'চেষ্টায় গ্রেফতার তার সহকারী তুহিন সিদ্দিকী অমিকে মানবপাচার ও পাসপো'র্ট আইনের পৃথক দুই মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জু'র করেছেন আদালত।
বুধবার শুনানি শেষে ঢাকার পৃথক দুই মেট্রো'পলিটন ম্যাজিস্ট্রে'ট এ রিমান্ড মঞ্জু'র করেন। দুই মামলার তদ'ন্ত কর্মকর্তা তাকে দশ দিন করে মোট বিশ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছিলেন।
আর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
গত ১৪ জুন দুপুরে রাজধানীর উত্তরা-১ নম্ব'র সেক্ট'রের-১২ নম্ব'র রোডের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর আগে মঙ্গলবার পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা'চেষ্টার মামলায় ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী অমির জামিন মঞ্জু'র করেন আদালত।
এর আগে গত ২৩ জুন চিফ জুডিশিয়াল ম্যা'জিস্ট্রে'ট আদালত দুই আসামির পাঁচ দিন করে রিমা'ন্ডে নেওয়ার আদেশ দেন।
গত ১৪ জুন ধর্ষ'ণ-হত্যা'চেষ্টা'র অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন ও তার বন্ধু অমির নাম উল্লেখ করে আরও চারজনকে অজ্ঞাত আসামি করে পরীমনি সাভার থানায় মামলা করেন।
১৫ জুন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তার বন্ধু অমিসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় করা মাদক মামলায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘গত ৮ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার বনানীর বাসা থেকে কস্টিউম ডিজাইনার জিমি (৩০), অমি (৪০) ও বনিসহ (২০) দু’টি গাড়িতে করে তারা উত্তরার উদ্দেশে রওনা হন। পথে অমি বলে বেড়িবাঁধের ঢাকা বোট ক্লাবে তার দুই মিনিটের কাজ আছে।’
‘অমির কথামতো তারা সবাই রাত আনুমানিক ১২টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গিয়ে গাড়ি দাঁড় করায়। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে ফোনে কথা বলে। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয়। অমি ক্লাবের ভেতরে গিয়ে বলে এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, তোমরা নামলে নামতে পার।’
এজাহারে পরীমনি আরও বলেন, ‘তখন আমার ছোট বোন বনি প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে বোট ক্লাবে প্রবেশ করে ও বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট থেকে বের হতেই এক নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ আমাদের ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার প্রস্তাব দেন। আমরা বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ এক নম্বর আসামি মদপানের জন্য জোর করেন। আমি মদপান করতে না চাইলে এক নম্বর আসামি জোর করে আমার মুখে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। এতে আমি সামনের দাঁতে ও ঠোঁটে আঘাত পাই।’
‘এক নম্বর আসামি (নাসির উদ্দিন মাহমুদ) আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন ও আমাকে জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে টেবিলে থাকা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে আমার গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি নাসির উদ্দিন মাহমুদকে বাধা দিতে গেলে তাকেও মারধর করে জখম করেন।’
এর আগে গত ১৩ জুন রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন।