Sunday, 15 August 2021

পালিয়ে কোথায় গেলেন আশরাফ গনি

পালিয়ে কোথায় গেলেন আশরাফ গনি



রাজধানী কাবুলে প্রবেশের খবরে শহরে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও সাধরণ মানুষ ভয়ে শহর ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি তাজিকিস্তানের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছেন বলে  দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স রোববার জানিয়েছে। 

আশরাফ গনির সাথে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট আমানুল্লাহ সালেহও রয়েছেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এর আগে, প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র পালানোর দাবি নাকচ করে বলছে, প্রেসিডেন্ট পালিয়ে যাননি। ফাস্ট লেডির সঙ্গে রোববার সারাটা সকাল তিনি প্রেসিডেন্ট প্যালেসের বাগানে কাটিয়েছেন।

তবে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববারই আফগান সরকারের শীর্ষস্থানীয় এই দুজন পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেছেন। যদিও সমর্থিত সূত্র থেকে পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি।

তালেবানের অগ্রযাত্রা এবং রাজধানীর প্রবেশদ্বারে তাদের অবস্থান নেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর শহরের বাসিন্দারা কাবুল ছেড়ে পালাতে শুরু করেছে।

রাজধানী কাবুলের অনেক মানুষ গাড়িতে করে শহর থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। কোন কোন এলাকা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে বন্দুকের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। 
তালেবানদের সাথে যোগ দিয়েছেন সিলেটের যুবক আব্দুর রাজ্জাক

তালেবানদের সাথে যোগ দিয়েছেন সিলেটের যুবক আব্দুর রাজ্জাক



তালেবানদের সাথে যোগ দিয়ে জেহাদ করার লক্ষে আফগানিস্তান গিয়েছেন সিলেটের যুবক আব্দুর রাজ্জাক।

সিলেট নগরীর বাসিন্দা ২০ বছর বয়েসি আব্দুর রাজ্জাক গত মার্চ মাসে হঠাৎ করেই বন্ধুদের সঙ্গে নিখোঁজ হয়ে যান।


পরে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানায়, ‘জেহাদ’ করতে রাজ্জাক আফগানিস্তানে চলে গেছেন।

এঘটনা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তার আত্মীয়-স্বজন। পুলিশ নিশ্চিত করে জানায়, আব্দুর রাজ্জাক এখন আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন।

পুলিশের বক্তব্য, কথিত ‘হিজরত’ আর ‘মুসলমানদের রক্ষার’ নামে আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িছাড়া হয়েছেন। তার বড় ভাই সালমান খান তার নিখোঁজের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সালমান গণমাধ্যমকে জানান, গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যা ৭টায় বাসা থেকে বের হন আব্দুর রাজ্জাক। ‘দুদিন বন্ধুর বাসায় থাকব’- এমনটি বলে তিনি সিলেট নগরীর লামাবাজারস্থ বাসা ছাড়েন তিনি। সেখান থেকে রাজ্জাক যান বন্ধু ফরিদের বাসায়। ২৫ মার্চ ফরিদের বাসা থেকে নিজ বাসায় ফেরার কথা থাকলেও আর ফেরেননি তিনি।


সম্প্রতি আব্দুর রাজ্জাকের সন্ধান দিয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। সংস্থাটি বলছে, ভারত হয়ে রাজ্জাক এখন আফগানিস্তানে অবস্থান করছেন। তিনি একা নন, তার সঙ্গে আরও অনেক বাংলাদেশি যুবক আছেন। সেখানে তালেবানদের সহযোগী হিসেবে তারা কাজ করছেন।

শনিবার (১৪ আগস্ট) রাতে রাজ্জাকের ভাই সালমান খান বলেন, রাজ্জাক লামাবাজারের একটি কলেজের শিক্ষার্থী। ছোটবেলা থেকেই খুব শান্তপ্রকৃতির সে। দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে নিয়মিত নামাজ আদায় করে। খুব বেশি নয়, হাতেগোনা কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে ছিল তার চলাফেরা। প্রয়োজন ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে কথা বলত না রাজ্জাক। এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। সে যে আফগানিস্তান যেতে পারে— এটা বিশ্বাস হয় না।


সম্প্রতি পুলিশ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিটিটিসি। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তাদের অনেক বন্ধু কথিত হিজরতের নামে আফগানিস্তান গেছেন। তাদের মধ্যে রাজ্জাকও রয়েছেন। রাজ্জাকের ছবি দেখে তারা বিষয়টি সিটিটিসিকে নিশ্চিত করেন।

রাজ্জাক কীভাবে আফগানিস্তানে গেল— জানতে চাইলে সিটিটিসি জানায়, প্রথমে ভারত, এরপর পাকিস্তান হয়ে তিনি আফগানিস্তান পৌঁছেছেন। হিজরতের নামে তালেবানদের সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করাই তার মূল উদ্দেশ্য। রাজ্জাক শুধু একাই যাননি। তার মতো আরও অনেক যুবক হিজরতের নামে গ্রুপ করে তালেবানদের ডাকে আফগানিস্তানে যাচ্ছেন। তারা তালেবানদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতে চান।

শুধু রাজ্জাক নন তার মতো আরও অনেকে বর্তমান আফগান-পরিস্থিতি নিয়ে বেশ উদ্বেলিত। তাদের মধ্যে তালেবান ফ্যান্টাসি কাজ করছে। তালেবানদের সঙ্গে তারাও বিজয়ের সঙ্গী হতে চান। এ কারণে দলে দলে সেখানে (আফগানিস্তান) যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকে সফলও হয়েছেন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিটিসি’র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অ্যাডিশনাল এসপি) পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক আগে থেকেই আমরা রাজ্জাকের বিষয়ে জানতাম। তিনি আফগানিস্তান যেতে পারেন- এমনও সন্দেহ ছিল। সম্প্রতি কয়েকজন জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি যে, তিনি আফগানিস্তান গেছেন।

রাজ্জাকের ভাইয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, ছোট বেলা থেকেই তিনি খুবই শান্ত স্বভাবের ছিলেন। একা একা থাকতে পছন্দ করতেন। নিয়মিত নামাজও পড়তেন। কলেজ বন্ধ থাকলে বন্ধুদের সঙ্গে তাবলিগ জামাতে যেতেন। সব সময় কম কথা বলতেন। কাজ ছাড়া অতিরিক্ত কথা বলতেন না। রাজ্জাক বলতেন, ‘অতিরিক্ত কথা বলে যদি কারও মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে তো আমি পাপ করে ফেললাম। এ কারণে কম কথা বলাই ভালো।’

বড় ভাই সালমান বলেন, ‘ফোনেও কারও সঙ্গে বেশি কথা বলত না সে। গান-বাজনা পছন্দ করত না। ঘরে কোনো দিন টিভিও কিনতে দেয়নি।’ আমাকে প্রায়ই বলত, ‘মুসলমানদের ওপর অত্যাচার করে সবাই মজা পায়। সবাই শুধু মুসলমানদের ওপর দোষ চাপায়। আমরা (মুসলমানরা) কী এতই খারাপ? পৃথিবীতে আমাদের কি কোনো দাম নেই?’ আমরাও বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেইনি— বলেন সালমান।


ছোট ভাইয়ের নিখোঁজ হওয়ার দিনের বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় রাজ্জাক তার বন্ধু ফরিদের বাসায় যায়। সেখানে সে একদিন থাকবে বলে আমাদের জানায়। ফরিদ যেহেতু লামাবাজার এলাকার ভাতলিয়া মসজিদের হুজুর, মসজিদের কোয়াটারেই সে থাকে, এ কারণে বাধা দেইনি। এরপর সে আর ফিরে আসেনি।

তিনি বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে ১ এপ্রিল কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করি। নিখোঁজ হওয়ার আগের দিন রাজ্জাক আমাকে বলেছিল, ‘আমি ফরিদের বাসায় যাচ্ছি, একদিন থাকব।’ আমি বলেছিলাম, ‘যাওয়ার আগে আমার সঙ্গে দেখা করে যেও।’ কিন্তু সে দেখা না করেই ফরিদের বাসায় যায়। এর আগেও দুদিন সে তার কোন বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে থেকে এসেছে। সেই বন্ধুর পরিচয় আমার জানা নেই।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রথমে তারা ভারতে প্রবেশ করছেন। সেখান থেকে একটি গ্রুপ তাদের পাকিস্তানে পার করে দিচ্ছে। পাকিস্তান থেকে আরেকটি গ্রুপ তাদের আফগানিস্তানে তালেবানদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
আমৃত্যু অকুতোভয় বঙ্গবন্ধুঃ  মো: আব্দুল মালিক

আমৃত্যু অকুতোভয় বঙ্গবন্ধুঃ মো: আব্দুল মালিক




আমৃত্যু অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু 
মো: আব্দুল মালিক

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আমৃত্যু অকুতোভয় একজন জাতীয়তাবাদী নেতা, একজন বীর বাঙালি। তাঁর এই বীরত্বের প্রকাশ ঘটে একেবারে শৈশবে, অব্যাহত থাকে আমৃত্যু। এই মহান নেতার একশ একতম জন্ম বার্ষিকী ও ছেচল্লিশতম প্রয়াণ দিবস উপলক্ষ্যে এ সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করতে চাই।

১৯৩৮ সাল। অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ.কে ফজলুল হক এবং শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ আসবেন। তাঁদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। এনিয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে আড়াআড়ি চলছিল। কারণ শেরে বাংলা মুসলিম লীগের সাথে মিলে মন্ত্রী সভা গঠন করেছেন। এ সময় দু’একজন মুসলমানের উপর অত্যাচারও হয়। আব্দুল মালেক নামে বঙ্গবন্ধুর এক সহপাঠী ছিলেন। তাকে ‘হিন্দু মহাসভা’র সভাপতি সুরেন ব্যানার্জীর বাড়িতে ধরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। এই খবর পেয়ে শেখ মুজিবুর রহমান কয়েকজন ছাত্র নিয়ে সেখানে হাজির হন। তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। শেখ মুজিবকে দেখে রমাপদ নামে একজন হিন্দু ভদ্রলোক তাঁকে গালি দেন। তিনিও তার প্রতিবাদ করেন। রমাপদ থানায় খবর দিলে তিনজন পুলিশ এসে হাজির হয়। পুলিশের উপস্থিতিতেও শেখ মুজিব তাঁর সহপাঠী আব্দুল মালেককে ছেড়ে দিতে চাপ দেন। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তুমুল মারপিট হয়। তিনি দরজা ভেঙ্গে আব্দুল মালেককে কেড়ে নিয়ে আসেন। এ ঘটনায় হিন্দু নেতারা থানায় একটি মামলা করেন। এ মামলায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। “সকাল নয় টায় খবর পেলাম আমার মামা ও আরো অনেককে গ্রেফতার করে ফেলেছে। আমাদের বাড়িতে কী করে আসবে-থানার দারোগা সাহেবদের একটু লজ্জা করছিল। প্রায় দশটার সময় টাউন হল মাঠের ভিতর দাঁড়িয়ে দারোগা আলাপ করছে, তার উদ্দেশ্য হলো আমি যেন সরে যাই। টাউন হলের মাঠের পাশেই আমার বাড়ি। আমার ফুফাত ভাই মাদারীপুর বাড়ি। আব্বার কাছে থেকেই লেখাপড়া করত, সে আমাকে বলে, মিয়া ভাই, পাশের বাসায় একটু সরে যাও না।’ বললাম, ‘যাব না, আমি পালাব না। লোকে বলবে, আমি ভয় পেয়েছি।” অসমাপ্ত আত্মজীবনী-পৃষ্ঠা: ১১,১২। তখন তিনি মাত্র অষ্টম শ্রেণির ছাত্র, বয়স ১৭/১৮ বছর। সেই কিশোর বয়সেও বঙ্গবন্ধু পুলিশের ভয়ে পালান নি।

১৯৪৯ সালের ৩রা মার্চ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা ধর্মঘট করেন। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ৫ মার্চ থেকে এই ধর্মঘটে যোগ দেয়। এ ঘটনায় মোট সাতাশ জন ছাত্রকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করা হয়। তম্মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান সহ ছয় জনকে জরিমানা ও মুচলেকা দিতে বলা হয়। অন্যরা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে অস্বীকার করে বলেছিলেন-“শেখ মুজিব আবার এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে তবে ছাত্র হিসেবে নয়, একজন দেশকর্মী হিসেবে।” হ্যাঁ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। ব্যক্তিস্বার্থের জন্য বঙ্গবন্ধু অন্যায়ের সাথে কোনদিন আপোষ করেন নি এখানে এই পরিচয় ফুটে উঠেছে। 

১৯৬৬ সাল। শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করে দেশব্যাপী সভা-সমাবেশের মাধ্যমে জনমত গঠন করছেন। এতে ভীত হয়ে পাকিস্তান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ১৯৬৮ সালের জুন মাসে রাষ্ট্রদ্রোহিতার এক মামলা দায়ের করে। ১৯৬৯ সালের ২৮ জানুয়ারি এক ঐতিহাসিক দিন। এ দিন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা খ্যাত “রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য” মামলার প্রধান আসামী শেখ মুজিব বিশেষ ট্রাইবুনালে তাঁর ঐতিহাসিক জবানবন্দি প্রদান করেন। 

সকাল ১০.০৫ মিনিট। কড়া সামরিক প্রহরায় শেখ মুজিব ও অন্যান্যদের ট্রাইবুনালে আনা হলো। শেখ মুজিবের পরনে ছিল তাঁর চিরাচরিত পাজামা, পাঞ্জাবী, কালো কোট, চোখে কালো পুরু ফ্রেমের চশমা। মুখে সিগার পাইপ। দর্শকদের দিকে তাকালেন, মুচকি হাসলেন, দু’হাত ঘুরালেন, মাথা এদিক ওদিক নাড়ালেন, আত্মীয় স্বজনরা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন কিন্তু তিনি নির্বিকার। আবার হাসলেন। তারপর নির্দিষ্ট আসনে বসে পড়লেন। 
সকাল ১০:১০ মিনিট। বিচারপতি ত্রয় আসন গ্রহণ করলেন। ফাইলপত্র খুললেন, চারদিকে পিনপতন নিরবতা। শেখ মুজিব পায়ের উপর পা তুলে শান্ত ভাবে বসে আছেন। একমনে টেনে চলেছেন তাঁর প্রিয় পাইপ।
ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি এম.এ রহমান নড়েচড়ে বসলেন। একবার তাকালেন ট্রাইবুনাল কক্ষের দিকে। তারপর অর্ডার অর্ডার বলে একটি ফাইল হাতে তুলে নিলেন। তাকালেন শেখ মুজিবের দিকে। তারপর ধীরস্থির কন্ঠে, সরকার কর্তৃক আনীত অভিযোগ সমূহ পাঠ করলেন, বললেন, আপনি শেখ মুজিবুর রহমান, পাকিস্তানী সরকারের আনীত অভিযোগের তদন্তে দোষী প্রমাণিত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে আপনি আপনার আত্মপক্ষ সর্মথন করে আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন।

১০.১৫ মিনিট। শেখ মুজিব উঠে দাঁড়ালেন। ধীর পদক্ষেপে কাঠগড়ায় গিয়ে উঠলেন। শপথবাক্য পাঠ করলেন। কোটের ভেতর থেকে কয়েক পৃষ্ঠা কাগজ বের করলেন। একবার তাকালেন দর্শকদের দিকে। সহসা তাঁর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। তারপর জলদগম্ভীর কন্ঠে উচ্চারণ করলেন- ‘মিঃ চেয়ারম্যান, স্বাধীনতাপূর্ব ভারতীয় বঙ্গীয় মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে আমার বিদ্যালয় জীবনের সূচনা হইতে আমি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে সংগ্রাম করিয়াছি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রামে আমার লেখাপড়া পর্যন্ত বির্সজন দিতে হইয়াছে। ............। 

বর্তমান মামলা উল্লেখিত নিষ্পেষন ও নির্যাতন নীতির পরিণতি ছাড়া আর কিছুই নয়। অধিকন্তু স্বার্থবাদী মহল কর্তৃক শোষণ অব্যাহত রাখার যে ষড়যন্ত্রের জাল বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিস্তার করিয়াছে এই মামলা তাহার বিষময় প্রতিক্রিয়া। আমি কখনও এমন কিছু করি নাই বা কোনদিনও এই উদ্দেশ্যে স্থল, নেভি বা বিমান বাহিনীর কোন কর্মচারীর সংস্পর্শে কোন ষড়যন্ত্রমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করি নাই। আমি নির্দোষ এবং এ ব্যাপারে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।” এভাবেই তাঁর জবানবন্দি শেষ করেন। এরপর আইয়ুব সরকার নিঃশর্তভাবে ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এই মামলা নিয়ে বাঙালি জাতি উদ্ভিগ্ন থাকলেও -বংগবন্ধু ছিলেন অকুতোভয়, নির্বিকার। 

৭ই মার্চ ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষু ও পাকিস্তানের বোমারু বিমানের ভয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কৌশলে স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। 

২৫শে মার্চ ১৯৭১ অপারেশন সার্চ লাইটের রাতে মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে স্বাধীনতা ঘোষনা করে তিনি মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে যান নি, বাসায় অবস্থান করছিলেন। সেদিন রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন তাঁকে গ্রেফতার করে তখন তিনি বীরের মতো অবিচল ছিলেন। গ্রেফতারের পর সামরিক প্রহরারত অবস্থায় পাকিস্তান সরকার তাঁর যে ছবিটি প্রকাশ করে সেখানে তাঁকে বীরের মত বসে থাকতে দেখা যায়। 

৯ আগস্ট ১৯৭১। পাক সরকার এক বিবৃতিতে জানাল ১১ আগস্ট বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনালে শেখ মুজিবের বিচার শুরু হবে। আসামী শেখ মুজিব তাঁর বক্তব্য পেশের উপযুক্ত সুযোগ পাবেন। নিজের পছন্দমত যে কোনো পাকিস্তানি আইনজীবী নিযুক্ত করতে পারবেন। তাঁর বিচার সম্পর্কে আবির আহাদ নামক একজন সাংবাদিককে তিনি বলেন, “আমাকে পেশোয়ারের একটা কুখ্যাত কারাগার থেকে ১০ আগস্ট রাতে কড়া পাহারায় বের করে আনা হলো। তারপর লায়ালপুর সামরিক কারাগারে ঢুকালো। একজন সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ারকে আমার পাহারায় রাখা হলো। ১১ তারিখ সকাল ১০টায় আমাকে সেনানিবাসের অভ্যন্তরে কোনো এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানেই বিশেষ সামরিক ট্রাইবুনাল বসেছে। বেলা ১১টায় আমাকে বিচার কক্ষে হাজির করা হলো। আমার সামনে সামরিক পোশাক পরিহিত তিনজন অফিসার। এরাই আমার বিচার করবে। তিনজনের মাঝখানের অফিসার সম্ভবতঃ একজন ব্রিগেডিয়ার, আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ও পাকিস্তানকে খন্ড-বিখন্ড করার মারাত্মক রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধে আপনি শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছেন। এ প্রেক্ষিতে এই আদালত আপনাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিচ্ছে, আপনি ইচ্ছে করলে আপনার বক্তব্য পেশ করতে পারেন।’ ট্রাইবুনালের চেয়ারম্যানের কথা শোনার পর আমি নিজের অজান্তে হাসিতে ফেটে পড়ি। বলি, চেয়ারম্যান সাহেব, আপনার প্রেসিডেন্ট সাহেব কি জানেন না যে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আইনানুগ রাষ্ট্রপতি ? আমার বিচার করার ক্ষমতা আপনার সরকারের আছে কি ? এ কথাটা আপনি দয়া করে আপনার প্রেসিডেন্টকে বলবেন। অবশ্য আমি আপনাদের হাতে বন্দী। আপনারা অনায়াসেই আমাকে মেরে ফেলতে পারেন। তবে মৃত্যুর ভয়ে শেখ মুজিব ভীত নয়। জানেন কি, ‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই।’ আমি আমার বাঙালি জাতিকে নির্দেশ দিয়ে এসেছি। ওরা স্বাধীনতার জন্যে যুদ্ধ করছে। আমাকে হত্যা করতে পারেন কিন্তু আমার জাতিকে নয়। ওরা হানাদার পাকবাহিনীকে প্রতিরোধ করছে , রক্তের প্রতিশোধ নিচ্ছে, আমার বাংলাদেশকে ওরা মুক্ত করে ছাড়বে ইনশাল্লাহ। মি: চেয়ারম্যান, আমার শেষ অনুরোধ, আমাকে হত্যা করার পর, আমার লাশটা আমার বাংলার মাটিতে পাঠিয়ে দিবেন।’ সেই কারাগারে তাঁর জন্য কবর খোড়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি ভয়ে ভীত হন নি।  

১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১। দেশ স্বাধীনের পর বন্দী শেখ মুজিবের সাথে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ভূট্টো দেখা করেন। তখনও বঙ্গবন্ধু জানতেন না, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। তথাপিও তিনি ভূট্টোর সাথে যেভাবে আলাপ করেন তাতে তাঁর আত্মমর্যাদা ও বীরত্ব প্রকাশ পেয়েছে। 

৮ জানুয়ারি ১৯৭২ যুক্ত্রাজ্য ও ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। বিশ্বের প্রাচীন ও বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য ও ভারত। এই দুইটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধান এবং পরবর্তী সময় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সাথে তিনি যেভাবে মাথা উঁচু করে, আত্মমর্যাদার সাথে আলাপ আলোচনা করেছেন তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।
 
১৫ আগস্ট ১৯৭৫। সেই ভয়াবহ কালোরাত। যে রাতে মীরজাফরের উত্তরাধিকারী, স্বাধীনতার পরাজিত শত্রুরা আর্ন্তজাতিক ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ি কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর বাড়িতে আক্রমণ করে। সেদিন সেনাপ্রধান কে.এম শফিউল্লাকে ফোন করে তিনি শান্ত ও সাবলীল কণ্ঠে বলেছিলেন, “শফিউল্লা তোমার বাহিনী আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে, কামালকে বোধহয় মেরে ফেলেছে, তুমি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ কর।” তারপর তিনি তাঁর শখের পাইপ হাতে নিয়ে কক্ষ থেকে বারান্দায় এসে দেখেন তাঁর কাজের ছেলে ‘আব্দুল’ গুলিবিদ্ধ। তিনি বীরের মতো গর্জন করে বলেন ও আমার কাজের ছেলে ওকে কেন গুলি করা হয়েছে ? “তোরা কে, কি চাস ? ” তখন সামনে থাকা সৈনিকটি ভড়কে একপাশে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পিছনে থাকা ক্যাপ্টেন হুদা ও মেজর নূর স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। গুলি বঙ্গবন্ধুর বুকে লাগে, তিনি সিঁড়ির উপর লুটিয়ে পড়েন এবং সেখানেই শাহাদাত বরণ করেন। সেই ঘটনা ও ছবি সাক্ষ্য দেয় মৃত্যুর পূর্বক্ষণেও তিনি ছিলেন বীরের মতো অবিচল। প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালানোর চেষ্টা না করে, বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বা পরিবারের কথা চিন্তা না করে কাজের ছেলে আব্দুলের চিন্তায় মগ্ন। অভ্যাসগতভাবে সাহসিকতার সাথে অধীনস্তদের ভালো মন্দের খোঁজ নেয়া, অন্যায়ের প্রতিবাদ ও শাসন করা থেকে এ সময়ও তিনি বিরত থাকেন নি। পবিত্র হাদীস শরীফে আছে, “যখন শত্রুর সম্মুখীন হইবে তখন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিও না।” বঙ্গবন্ধু আমৃত্যু এই সত্য লালন করেছেন।

পক্ষান্তরে তথাকথিত স্বাধীনতার ঘোষক সৈনিক জিয়া ২৫ মার্চ রাতে বীরের মতো তীরের বেগে তাঁর পাকিস্তানী কমান্ডারের নির্দেশে বন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে। পথিমধ্যে জনতার ব্যারিকেড অপসারণ করে যেতে তার দেরি হচ্ছিল। তখন ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী তাঁকে রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম শহর ছেড়ে কালুরঘাটের দিকে চলে যান। অথচ ঐ সময় চট্টগ্রামে পুলিশ, ইপিআর, আর্মির ৭৫% ছিল বাঙালি। ক্যাপ্টেন রফিক ও ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী ভূঁইয়া সামান্য সৈন্য ও অস্ত্র নিয়ে প্রাণ পণে যুদ্ধ করে কয়েকদিন চট্টগ্রাম নিজেদের দখলে রাখতে সক্ষম হন। জিয়া যদি সেদিন তার বাহিনী নিয়ে কালুরঘাটের দিকে না গিয়ে বন্দরের অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিজের দখলে নিতেন বা জনগণের হাতে তুলে দিতেন বা ধ্বংস করে ফেলতেন তাহলে যুদ্ধের গতি প্রকৃতি অন্যরকম হতো। 

১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়া যখন সেনা বিদ্রোহে নিহত হন তখন কী তিনি বঙ্গবন্ধুর মতো সাহস দেখাতে পেরেছেন ? 

জন্মিলে মরিতে হবে, এ বিধির বিধান। তবে সকল মৃত্যু সমান নয়। কবির ভাষায়-
‘নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান
   ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’ ।

বঙ্গবন্ধু তুমি প্রকৃতই একজন অকুতোভয় বীর বাঙালি ছিলে। মৃত্যুর পূর্বক্ষণেও সেই বীরত্ব দেখিয়ে গেছো। তোমার ক্ষয় নাই, তুমি অমর, অক্ষয়। বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তুমি ততদিন থাকবে। বিশবের ইতিহাসে তোমার স্থান সবর্ণাক্ষরে লিখা থাকবে। 

 বঙ্গবন্ধু ঘাতকরা তোমার নশ্বর দেহ হত্যা করেছে, তোমার আদর্শকে হত্যা করতে পারে নি। তোমার আদর্শ লালন করে তোমারই সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়ে তোমার সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে ইনশাল্লাহ। তোমার ৪৬তম প্রায়াণ দিবসে ১৫ আগষ্টের সকল শহীদের মাগফেরাত ও জান্নাতুল ফেরদৌস কামনা করছি। 

মো: আব্দুল মালিক
সহ-সভাপতি বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, সিলেট জেলা শাখা।
সাধারণ সম্পাদক- বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সিলেট জেলা শাখা।
জাতীয় শোক দিবস আজ

জাতীয় শোক দিবস আজ



আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির শোকের দিন। ইতিহাসের কলঙ্কিত কালো দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়। ৪৫ বছর আগে এ দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল ক্ষমতালোভী নরপিশাচ কুচক্রী মহল। বাঙালির মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তখনই ঘটানো হয় ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনা। সেই নির্মম ঘটনার বর্ণনায় কবি রফিক আজাদ তার ‘এই সিঁড়ি’ কবিতায় লিখেছেন- ‘সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-/ স্বপ্নের স্বদেশ ব্যেপে/ সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে/ অমল রক্তের ধারা ব’য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে॥’

সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ ও মেয়ে বেবি, সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

প্রতি বছর দিনটি আসে বাঙালির হৃদয়ে শোক আর কষ্টের দীর্ঘশ্বাস হয়ে। পুরো জাতি গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করে। এ বছর করোনাভাইরাস মহামারী পরিস্থিতিতেও জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে আগস্টের প্রথম দিন থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে।


আজ জাতীয় শোক দিবস যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যে পালন করা হবে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে মহান আল্লাহর দরবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সব শহীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।

বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর গোটা বিশ্বে নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। হত্যাকারীদের প্রতি ছড়িয়ে পড়েছিল ঘৃণা। পশ্চিম জার্মানির নেতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী উইলি ব্রানডিট বলেছিলেন, বাঙালিদের আর বিশ্বাস করা যায় না। যে বাঙালি শেখ মুজিবকে হত্যা করতে পারে তারা যে কোনো জঘন্য কাজ করতে পারে।

বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর স্বাধীনতাবিরোধীরা এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় পুনর্বাসিত হতে থাকে। তারা এ দেশের ইতিহাস থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে নানা পাঁয়তারা করে। শাসকদের রোষানলে বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণও যেন নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ঠেকাতে কুখ্যাত ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ জারি করেছিল মোশতাক সরকার। দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হলে ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ উন্মুক্ত করা হয়। বিচার শুরু হয় ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ললাটে যে কলঙ্কতিলক পরিয়ে দেয়া হয়েছিল, ৩৫ বছরেরও বেশি সময় পর ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি সেই কলঙ্ক থেকে জাতির মুক্তি ঘটে। বঙ্গবন্ধু হত্যার চূড়ান্ত বিচারের রায় অনুযায়ী ওই দিন মধ্যরাতের পর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকায় আরও কয়েকজন খুনির সাজা এখনও কার্যকর করা যায়নি।


Saturday, 14 August 2021

করোনার পর চুল পড়া থামছে না? নিজেই বানান এই তেল

করোনার পর চুল পড়া থামছে না? নিজেই বানান এই তেল



স্বাস্থ্যঃ করোনা থেকে সেরে উঠলেও চুল পড়া সমস্যা কাটছে না অনেকের। শরীরে ভিটামিন ডি-সহ যাবতীয় খনিজ ও অন্যান্য ভিটামিন ঠিক থাকার পরও যদি চুল পড়ে তবে একটি ঘরোয়া তেল তৈরি করেই দূর করতে পারেন এ সমস্যা।

মেথি তেল তৈরির উপকরণ : মাঝারি আকারের এক বোল খাঁটি নারিকেল তেল, চার টেবিল চামচ মেথিদানা ও কিছু কারি পাতা।

প্রস্তুত প্রণালী : সবগুলো উপকরণ একসঙ্গে মিশিয়ে চুলায় অল্প আঁচে ১০ মিনিট জ্বাল দিন। এরপর মিশ্রণটা ঠান্ডা করে একটি কাচের জারে ২-৩ দিন রেখে দিন। এ ২-৩ দিন তেলটি ব্যবহার করবেন। এরপর সপ্তাহে অন্তত দু’বার তেলটি ভালো করে চুল ও স্কাল্পে মাখুন। ক’দিন পর নিজেই পরিবর্তনটা বুঝতে পারবেন।
জকিগঞ্জে ফ্রি ঔষুধ, অ্যাম্বুলেন্স-অক্সিজেন সেবা সেন্টারের উদ্বোধন

জকিগঞ্জে ফ্রি ঔষুধ, অ্যাম্বুলেন্স-অক্সিজেন সেবা সেন্টারের উদ্বোধন


করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গরীব-অসহায় রোগীদেরকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফ্রি অক্সিজেন সেবা, ২৪ ঘন্টা ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান ও সর্বসাধারণকে করোনার ভ্যাক্সিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণ ও নিবন্ধনে সহায়তা করতে সিলেট হেলথ এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (শেইড) এর উদ্যোগে জকিগঞ্জ উপজেলা সেবা সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে।


শনিবার দুপুরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মিলনায়তনে জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এ সেবা সেন্টারের উদ্বোধন করা হয়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শেইড ট্রাস্টের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুনতাসির আলী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, সমাজ সেবায় ধর্ম-বর্ণ, দল-মত ও পথের কোন ভেদাভেদ নেই। নির্বিশেষে সকল সৃষ্টির সেবায় আত্মনিয়োগ করা ইসলামের শিক্ষা। মানবতা এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কোন ভেদাভেদের সুযোগ নেই। মানুষকে বাঁচানোই আসল রাজনীতি। জকিগঞ্জের প্রবাসীরা তাদের মানবিক চিত্তের পরিচয় দিয়ে শেইড ট্রাস্টের সহযোগীতায় এগিয়ে এসেছেন। আমরাও স্বেচ্ছাসেবী হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। সবসময়ই অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করতে শেইড ট্রাস্ট অঙ্গীকারবদ্ধ।


সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মানুষের এই দুর্দিনে জকিগঞ্জবাসী ঐক্যবদ্ধ। মানুষের কল্যাণে মানবিক কাজ করাটাও ইবাদত। শেইড ট্রাস্টের মানবিক এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে সামর্থ্যানুযায়ী সবাই ভূমিকা রাখা দরকার। আমার পক্ষ থেকে সবসময় মানবিক এই কর্মসূচীতে সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।

শেইড ট্রাস্ট জকিগঞ্জ সেবা সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর খায়রুল ইসলাম মুনশীর পরিচালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শায়খ মাওলানা আবদুল মুছাব্বির।

বক্তব্য রাখেন, জকিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী খলিল উদ্দিন, শেইড ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসাইন, ট্রাস্টি সদস্য মাওলানা নেহাল আহমদ, মাওলানা মুখলিছুর রহমান, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাকিম হায়দার, মাজলিসুল ইত্তিহাদ জকিগঞ্জ এর সহ সভাপতি যুক্তরাজ্য প্রবাসী হাফিজ আবদুল হাসিব, কোষাধ্যক্ষ কাতার প্রবাসী মাওলানা আবদুল হাসিব চৌধুরী, অনুষ্ঠানের সদস্য সচিব মাওলানা আলাউদ্দিন তাপাদার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম, উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শিহাব আহমদ, সাংবাদিক কেএম মামুন, মাওলানা আবদুস সালাম ও মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।


শেইড ট্রাস্ট জকিগঞ্জ সেবা সেন্টারের কো-অর্ডিনেটর খায়রুল ইসলাম মুনশী জানিয়েছেন, সেবা সেন্টারের প্রয়োজনীয় ব্যয় স্পন্সর করছে প্রবাসীদের সংগঠন মাজলিসুল ইত্তিহাদ জকিগঞ্জ এবং কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে উদ্দিন ফ্যামিলি ফাউন্ডেশন ইউএসএ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত জকিগঞ্জ উপজেলার গরীব-অসহায় রোগীদেরকে এই সেবা সেন্টারের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফ্রি অক্সিজেন সেবা, ২৪ ঘন্টা ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান ও সর্বসাধারণকে করোনার ভ্যাক্সিন গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করণ ও নিবন্ধনে সহায়তা করা হবে। তাছাড়াও স্বচ্ছল রোগীদেরকে ন্যায্য মূল্যে প্রয়োজনীয় সেবা দিয়ে যাবে।

সূঁচ নয়, নাক দিয়ে করোনা টিকা, ট্রায়াল হবে বাংলাদেশে

সূঁচ নয়, নাক দিয়ে করোনা টিকা, ট্রায়াল হবে বাংলাদেশে



সূঁচ ফোটানো টিকা নয়, বরং নাক দিয়ে টেনে নিলেই সেটা করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষা দেবে। এমন একটি টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন সুইডেনের বিজ্ঞানীরা।


পাউডারের মতো নাক দিয়ে নেয়ার সেই টিকা সুইডেনে ইতোমধ্যে প্রাণীর দেহে পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, এবং সেখানে শতভাগ সফলতা পাওয়া গেছে বলে বিজ্ঞানীরা বলছেন। এখন বিজ্ঞানীরা মানব ট্রায়াল করতে চান।

এই গবেষণাকে যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করছেন মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও মুগদা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।

''প্রচলিত টিকা সংরক্ষণে অনেক ব্যবস্থা নিতে হয়। সেটা নেয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে হয়। কিন্তু এই গবেষণাটি যদি সফল বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে সেটা শুধু করোনাভাইরাসের জন্য নয়, অন্যসব টিকা নেয়ার ব্যাপারটিও অনেক সহজ করে দেবে।'' বলছেন অধ্যাপক কবির।


বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছেন প্রায় ২৪ হাজার মানুষ। ফলে বাংলাদেশে কোন টিকা উৎপাদনের সুযোগ পেলে সেটা রোগ প্রতিরোধে বিশাল সুবিধা দেবে বলে এই চিকিৎসক বলছেন।

প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি চিকিৎসকের উদ্যোগে মানব ট্রায়ালের প্রথম পর্যায়ের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেজন্য এ মাসেই প্রস্তাবটি বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলে (বিএমআরসি) জমা দেয়া হবে।

সুইডেনের ক্যারোলিস্কা ইউনিভার্সিটি গবেষণা করে এই টিকাটি আবিষ্কার করেছে। বিশ্বের আরও কয়েকটি দেশ নাক দিয়ে নেয়ার মতো টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা করছে।

সুইডেনের ইম্যিউন সিস্টেম রেগুলেশন হোল্ডিং এবি বা আইএসআর মানব ট্রায়ালের জন্য কন্ট্রাক্ট রিসার্চ অর্গানাইজেশন (সিআরও) হিসাবে বাংলাদেশে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালস লিমিটেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে।


সিআরও হিসাবে কাজ করবেন অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ এবং অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।

প্রচলিত টিকার সঙ্গে এই টিকার কী পার্থক্য?

অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলছেন, এটি একেবারে অভিনব একটি আবিষ্কার হবে। এটা টিকার ব্যাপারে ব্যাপক পরিবর্তন এনে দেবে।

এই টিকার জন্য কোন সূঁচ ব্যবহার করতে হয় না অর্থাৎ তা ইনজেকশন আকারে দিতে হয় না। এটি নাক দিয়ে টেনে নেয়া যাবে। টিকা দেয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে হবে না। বাসায় থেকে নিজেরাই টিকা নিতে পারবেন। ফ্রিজে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখার দরকার হবে না। বাসার স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখা যাবে।

নিউমোনিয়ার মতো অনেক ভাইরাস বায়ুবাহিত, নাক দিয়ে প্রবেশ করে। যেহেতু এটা নাকের মাধ্যমে দেয়া হবে, ফলে শরীরের সিস্টেমিক অ্যান্টিবডির পাশাপাশি স্থানীয় একটি অ্যান্টিবডি তৈরি হবে।
সহজে পরিবহন, সরবরাহ করা যাবে, ব্যবহারও সহজ হবে।

যেভাবে হবে মানব পর্যায়ের গবেষণা

অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, ‘আমরা রিসার্চ প্রটোকল তৈরি করেছি। এই মাসের শেষের দিকে সেটা বিএমআরসিতে এথিক্যাল পারমিশনের জন্য জমা দেবো। অনুমতি পাওয়া গেছে আশা করা যায়, সামনের মাসেই ট্রায়াল শুরু করা যাবে।

তবে এটা এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে তিনি জানান।

টিকার মতো ওষুধ আবিষ্কারে প্রাণীদেহে পরীক্ষার পর তিন দফায় মানব দেহের ওপর পরীক্ষা করতে হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা এতে অংশ নিয়ে থাকেন।

প্রথম দফায় অল্প সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে নিরাপদ বলে প্রমাণিত হলে সেই দ্বিতীয় দফায় আরও বেশি মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়। সেখানে সফলতা পাওয়া গেছে তৃতীয় পর্যায় কয়েক হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে ফেজ-ওয়ান ট্রায়ালে ১৮০ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর পরীক্ষা করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যারা সবাই স্বাস্থ্যকর্মী। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই পরীক্ষা হতে পারে।

সাধারণত যে দেশে ফেজ-ওয়ান ট্রায়াল হয়ে থাকে, সেই দেশেই পরবর্তী ফেজের ট্রায়ালগুলো হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে পরীক্ষা করে কী লাভ?


সুইডেনের এই আবিষ্কারের তথ্য জানতে পেরে ইউরোপ ও আমেরিকায় প্রবাসী কয়েকজন বাংলাদেশি এই ট্রায়াল বাংলাদেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে উদ্যোগী হন।

আইএসআর মালয়েশিয়া, মালদোভাসহ কয়েকটি দেশে পর্যালোচনার পর বাংলাদেশে ট্রায়ালে আগ্রহী হয়।

অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলছেন, ‘বাংলাদেশে ট্রায়াল হলে আমরা এই টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার তালিকায় থাকবো। আমরা সেটা উৎপাদনের অনুমতি পাবো। ফলে এটা আমাদের জন্য একটি বিরাট সুযোগ হবে। সেক্ষেত্রে এই টিকাটি আমরা দেশেই উৎপাদন করতে পারবো। বলা যেতে পারে, গ্লোবাল মার্কেটে আমাদের একটা শক্ত অবস্থান তৈরি হবে। 

৬ জুলাই এই টিকার উৎপাদনের ব্যাপারে বাংলাদেশি কোম্পানি ইউনিমেডের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করেছে আইএসআর।

আইএসআরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে এই টিকার উৎপাদন ও সরবরাহের এমওইউ করেছে আইএসআর।

অনুমোদন পেলে বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানি ইউনিমেড বছরে ১০ কোটি ইউনিট তৈরি করতে পারবে। পরবর্তী পাঁচ বছরে সেটি ৩০ কোটিতে নিয়ে যেতে পারবে। আইএসআর লভ্যাংশ এবং রয়্যালটি পাবে।

এর আগে চীনের টিকা সিনোভ্যাকের মানব ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরবর্তীতে নানা জটিলতায় তা আটকে যায়।


বর্তমানে শর্তসাপেক্ষে দেশীয় বঙ্গভ্যাক্সসহ ভারত ও চীনের দুইটি টিকার ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশে মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএমআরসি)।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে এখন অ্যাস্ট্রাজেনেকার পাশাপাশি, ফাইজার, মডার্না ও সিনোফার্মের টিকা দেয়া হচ্ছে।