Saturday 5 June 2021

মায়ের প্রতি ভালোবাসার অনন্য নজির, কবর খুঁড়ে অন্যত্রে নিলেন সন্তান

মায়ের প্রতি ভালোবাসার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন মঠবাড়িয়ার কৃষক মজিদ ফরাজী। মায়ের কবর খুড়ে অন্যত্র পুনঃস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন ৬২ বছর বয়সের এ কৃষক।

কৃষক মজিদ ফরাজী উপজেলার তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। ২০১৬ সালে তার মা ইন্তেকাল করলে তাদের বাড়ি সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ সমাহিত করা হয়।

কিন্তু গত বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দক্ষিণ তেতুলবাড়িয়া এলাকার মিরুখালী-সাফা খালের পারে বাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহবান করেন। এতে মজিদ ফরাজীর মায়ের কবর বাঁধের নিচে চাপা পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে প্রতীয়মান হয়।

এখবর জানার পর মজিদ ফরাজী মানসিকভাবে অস্থির হয়ে উঠেন। মজিদ ফরাজী জানান, মায়ের কবর রক্ষার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে ছোটাছুটি করি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে কোন সন্তোষজনক উত্তর পাইনি।

পরে এলাকাবাসী কবরের হাড্ডিগুলো স্থানান্তরিত করে পুনরায় কবরস্থ করার জন্য বলেন। কিন্তু এতে মায়ের প্রতি অমর্যাদা হবে এবং মায়ের আত্মা কষ্ট পাবে বলে আমি ওই প্রস্তাবে সাড়া দেইনি।

এক পর্যায়ে তিনি সমূলে মায়ের কবর তুলে অন্যত্র কবরস্থ করার সিদ্ধান্ত নেন। পরে গত রমজান মাসে কোদাল ও খোন্তা নিয়ে কবরের চারপাশে খুড়ে পুরো কবরটিকে তিনি মূল মাটি থেকে আলাদা করেন। এরপর কবরের নিচে এক হাত খোড়ার পর একটা করে গাছের গুড়ি স্থাপন করেন। এভাবে ৬টি গাছের গুড়ির উপর কবরটি তুলে ফেলেন। আর এ অসাধ্য কাজটি করতে তিনি সময় নিয়েছেন মাত্র ২০ দিনের মতো। তাও আবার রমজান মাসে রোজা রেখে। একজন ৬২ বছরের বৃদ্ধ মানুষ রোজা রেখে কোন আধুনিক যন্ত্রপাতি ছাড়া শুধুমাত্র কোদাল ও খোস্তা নিয়ে এই দুঃসাধ্য কাজটি করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দেন।

পরর্তীতে তিন হাত চওড়া, পাঁচ হাত লম্বা ও তিন হাত পুরু এই মাটির কবর সম্পূর্ণ ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে মোটা সুতা, সুপারি গাছ ও কাঠ দিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তা মূল কবর থেকে ১২/১৫ হাত দূরে স্থানান্তর করেন।

কৃষক মজিদ ফরাজীর মায়ের প্রতি এই অকৃত্রিম ভালোবাসার খবরটি তার অজান্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেছে। গত দুই দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কৃষক মজিদ ফরাজীকে স্যালুট জানাচ্ছেন হাজারও মানুষ। স্থানীয়রা জানান, কৃষক মজিদ ফরাজি এলাকায় সহজ সরল ও ধার্মিক মানুষ হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত।

তেতুলবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও মঠবাড়িয়া বন্দরের ব্যবসায়ী তানভীর হাফিজ জানান, মজিদ ফরাজীর মায়ের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার খবর ফেসবুকে দিতে জানেন না কবর খোড়ার সময় সেলফি তুলতেও জানেন না কিংবা মা দিবসে মাকে উইশ করতেও জানেন না কিন্তু হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা ও শক্তি উজাড় করে মাকে যে ভালোবাসতেন এটাই তার প্রমান।

কৃষক মজিদ ফরাজী জানান, আল্লাহর রহমত ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তার মায়ের কবর অন্যত্র পুনঃস্থাপন করতে পেরে তিনি আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন।


শেয়ার করুন