الخميس، 26 أغسطس 2021

ভারতে তিন তালাকের বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া সেই ‌আইনজীবীই ভুয়া!



ভারতে ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে আইনি লড়াই করা বিজেপি নেত্রী নাজিয়া এলাহিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি আইনজীবীই নন!

আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়, মিথ্যা আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির থেকে মামলা লড়ার জন্য টাকা নিয়েছেন নাজিয়া। কিন্তু সেই মামলা আর লড়েননি। বৃহস্পতিবার নাজিয়াকে গ্রেফতার করে গিরিশ পার্ক থানার পুলিশ।  


খবরে বলা হয়, নাজিয়া নিজেকে আইনজীবী হিসেবে দাবি করলেও তার কাছে এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। নাজিয়ার যোগদানের সময় বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীও হাজির ছিলেন। তবে এই গ্রেফতার নিয়ে আপাতত চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।

পুলিশের বরাত দিয়ে আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, সঞ্জীব আগরওয়াল নামে এক ব্যক্তি অভিযোগে জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা লড়ার জন্য তার থেকে ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন নাজিয়া। কিন্তু মামলা লড়েননি। এরপর ২০২০ সালে গিরিশ পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি। তদন্তে নেমে বার কাউন্সিল, বার অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকেই পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, নাজিয়ার আইনজীবী পরিচয় সঠিক নয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিন জানায়, তিন তালাক প্রথাকে অবৈধ ঘোষণা করার ভারতজুড়ে আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন ইশরাত জাহান ও তার ‘আইনজীবী’ নাজিয়া এলাহি। তিন তালাক প্রথার বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি আইনজীবী হিসেবেও লড়াই করেন নাজিয়া। এক্ষেত্রে তিনি সফলতাও পান। তার পক্ষেই রায় দেয় ভারতীয় আদালত। আদালতের মাধ্যমে ভারতে তিন তালাক অবৈধ ঘোষণা করা হয়। 


পরে ইশরাত ও নাজিয়া দুজনই বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপির দলীয় পতাকা তুলে দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাদের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেন আরও দেড়শতাধিক মুসলিম নারী। 


নাজিয়া ইস্যুতে নীরব বিজেপিঃ

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, ২০১৮ সালে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও দেবশ্রী চৌধুরীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন নাজিয়া। কিন্তু নাজিয়া গ্রেফতারের খবরে নীরবতা বজায় রেখেছে বিজেপি।

বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‌অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সবাইকে আমি চিনি না।'

নাজিয়াকে তিনি না চিনতে পারলেও বিজেপির লিগ্যাল ও মজদুর সেলের নেত্রী হিসাবে পরিচিত নাজিয়া। বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলের সদর দফতরে তাকে দেখা গিয়েছে। তার ফেসবুক পেজে একাধিক নেতা-নেত্রীর সঙ্গে ছবি রয়েছে।


যে কারণে তিন তালাক অবৈধ ঘোষণা করা হয়ঃ

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিনের খবরে বলা হয়, ২০১৫ সালে হঠাৎ দুবাই থেকে ফোন করে পনের বছরের বিবাহিত জীবনে ইতি টানেন ইশরাতের স্বামী মোহম্মদ মোর্তাজা আনসারি। ফোনে তিন তালাক বলে জানিয়ে দেন, তিনি অন্য একজনকে বিয়ে করতে চলেছেন। পর পর তিন মেয়ে জন্মানোয় দুবাইয়ে কর্মরত মোর্তাজা আস্তে আস্তে ইশোতের থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলেন। ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবনে ফাটল বড় হতে শুরু করেছিল। মাঝে মধ্যেই ফোনে ঝগড়া হত। ছেলে জায়েদ জন্মানোর পরেও সে ফাটল জোড়া লাগেনি। মোর্তাজা হুমকি দিতেন ফের বিয়ে করার।

একদিন ফোনে এ রকম ঝগড়ার মাঝেই পর পর তিনবার তালাক বলে ইশরতকে বর্তমান থেকে প্রাক্তন স্ত্রী করে দেন মোর্তাজা। শুধু তিন তালাক বলেই থেমে থাকেননি মোর্তাজা। ইশরাত পরে অভিযোগ করেছিলেন, মোর্তাজা দুবাই থেকে ফিরে তাদের চার সন্তানকে ইশরাতের থেকে কেড়ে নেন। তাদের নিয়ে বিহারের গ্রামে গিয়ে আবার একটা বিয়ে করেন।


এক পর্যায়ে ‘আইনজীবী’ নাজিয়া ইলাহির শরণাপন্ন হন ইশরাত। শুরু হয় আইনি লড়াই।

একদিকে আইনি লড়াই ও অন্যদিকে রাজপথে আন্দোলন দুটো করেছেন তারা সমানতালে। এ সময় বিজেপি তাদের সমর্থন জানায়। এক পর্যায়ে ভারতের আদালতে তিন তালাক অবৈধ ঘোষণা করা হয়। 

শেয়ার করুন