Tuesday 1 November 2022

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে উত্তাপ


দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকটসহ এ খাতে অনিয়ম, দুর্নীতির পাশাপাশি সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে। প্রশ্নোত্তর পর্বে এ বিষয়ে আলোচনা করেন বিএনপিদলীয় সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরে লুটপাট চলছে, ভয়ানক অরাজকতা চলছে। একদিন সময় দিন, সংসদে আলোচনা হোক। আমরা আলোচনা করব।’

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া সংসদ অধিবেশনে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে মো. হারুনুর রশীদ আরও বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের প্রশ্নোত্তর অন্তত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের কথা ৫০ বার বলেছেন। প্রসঙ্গ ছাড়াই তিনি এটা বলেছেন। দয়া করে আপনি জানাবেন, বিএনপি আমলে বিদ্যুতের দাম কত ছিল, গ্যাসের দাম কত ছিল? দায়মুক্তি কেন এখনো বহাল রেখেছেন।’

পরে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানিকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার সত্যতা জানতে চান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।

জবাবে সাধারণ আলোচনার পক্ষে একমত প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘জোট সরকারের আমলে দিনে ১৭ ঘণ্টা দেশ অন্ধকারে ছিল। বিদ্যুৎ চাওয়ায় গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’ 

এর আগে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘ভূতের মুখে রাম নাম মানায় না। আমি স্পষ্ট জানতে চাচ্ছি, বিএনপি সরকার যে গ্যাসের চুক্তি করেছিল এমন কোনো চুক্তির প্রমাণ আপনার কাছে আছে কি না? থাকলে সেটা এ সংসদে উত্থাপন করবেন। 
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিএনপির আমলে চালের দাম কত ছিল? একটি ডিমের দাম কত ছিল? দুধের কেজি কত ছিল? এ উত্তরগুলো সংসদে দেন। শুধু দায়ী করলে হবে না।’

তিনি বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আপনি সময় নির্ধারণ করে দেন। শুধু জ্বালানি সেক্টর নিয়ে আলোচনা হোক। আজকে মানুষের মধ্যে হাহাকার চলছে। তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। আজকে জ্বালানি উপদেষ্টা বলছেন, দিনের বেলায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। এটা কী হচ্ছে? আগামীতে বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম আর বাড়াব না, আপনি সেই আশ্বাস দেন।’

হারুনুর রশীদের এই বক্তব্যে সরকারদলীয় সদস্যরা হৈ চৈ শুরু করেন। একপর্যায়ে স্পিকার হারুনুর রশীদকে থামানোর চেষ্টা করেন। স্পিকার তাকে প্রশ্ন করার অনুরোধ জানালে হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আমি জোট সরকারের আমলে চাল, তেল, ডিম, বিদ্যুতের দাম কত ছিল- তা জানতে চাই।’এরপর প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জবাব দেন। 

এ সময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্য অনেক উত্তেজিত হয়েছেন। সত্য কথা অনেকে সহজভাবে নিতে পারেন না। আমিও চাই সংসদে একদিন সময় দেওয়া হোক। জ্বালানি নিয়ে আলোচনা হোক। নাইকো মামলা নিয়ে যে পরিমাণ তথ্য আমাদের হাতে আছে, তাদের নেতা তারেক জিয়ার বন্ধু যে পরিমাণ সাক্ষাৎকার এফবিআইয়ের কাছে দিয়েছেন, তার রেকর্ড আমরা তুলে ধরতে চাই। সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টে যে পরিমাণ চুরি হয়েছে, সেই তথ্য-প্রমাণও আমাদের হাতে আছে। আমরা সেগুলো এ সংসদের স্ক্রিনে দেখাতে চাই। খাম্বা কোম্পানি তৈরির পর লুটপাটের হিসাবও আমাদের কাছে আছে। নির্বাচন সামনে আসছে, প্রস্তুত থাকুন সবকিছু আমরা দেশবাসীকে দেখাব।

তিনি আরও বলেন, জোট সরকারের আমলে সবাই ১৭ ঘণ্টা অন্ধকারে ছিলেন। আর উনি বিদ্যুতের দামের কথা বলেন। অন্ধকারে থাকার যে সংকট, সেই কষ্টের কথা বলেন। সেই সময় বিদ্যুতের অপচয় ছিল ৪৪ শতাংশ। এ অপচয়টা দুর্নীতির মধ্যে পড়ে। পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন তারা। বিদ্যুৎ চাওয়ার কারণে কানসাটে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। খাদ্যই তো দিতে পারেননি, দাম নিয়ে আলোচনা কী হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আলোচনা চলবে। লজ্জা-শরম নেই বলেই তারা এ আলোচনা করেন।

এরপর সম্পূরক প্রশ্ন উত্থাপনকালে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা লোডশেডিংয়ের মধ্যে আছি। আশা করছিলাম এ পরিস্থিতির উন্নতি হবে। কিন্তু এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা জানালেন, আগামীতে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হতে পারে। জানি না কী পরিস্থিতি তৈরি হবে। তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় দেখলাম বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বেসরকারি কোম্পানি রেন্টাল-কুইক রেন্টাল কোম্পানিকে ৮৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আবার সঞ্চালন লাইনের অভাবে তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ নেওয়া যাচ্ছে না। আসলে পরিস্থিতি কী তা জানানো দরকার।

জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, বেসরকারি কোম্পানিকে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ কত দেওয়া হয়েছে- তা জানার জন্য চিঠি দিতে হবে। জ্বালানি উপদেষ্টা পরিস্থিতি খারাপ হলে দিনের বেলা বিদ্যুৎ বন্ধের কথা বলেছেন। কিন্তু সেই অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। আমরা ভালোর দিকে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সঞ্চালন লাইনের কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা জ্বালানির। সেই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে।

অবশ্য এর আগেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে কথা বলেন বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় হচ্ছে সোয়া এক লাখ কোটি টাকা। আর একই ধরনের একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ভারতের ব্যয় হচ্ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।’

পাকিস্তান আমলে ভূমি অধিগ্রহণ সত্ত্বেও কেন চারগুণ বেশি ব্যয় হচ্ছে? কাতারসহ অন্য দেশ থেকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও স্পট মার্কেট থেকে কেন জ্বালানি কেনা হচ্ছে’- তা জানতে চান তিনি। 

শেয়ার করুন